• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৮ বছর ধরেই ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি!

  কলমাকান্দা প্রতিনিধি, নেত্রকোণা

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৪৫
নেত্রকোনা
তিন চাঁকের তৈরী অগভীর কুঁপের ময়লা পানিই নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের একমাত্র ভরসা

পাহাড়ি ছড়ার ময়লা যুক্ত গোলা পানি না হয় টিলার নিচে তিন চাঁকের (চাঁক্কি) তৈরী অগভীর কুঁপে (কুয়ো বা ইন্দরা)’র ময়লা পানিই সীমান্তবর্তী কলমাকান্দায় শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের নিকট একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড় টিলাঘেরা পাঁচ পাড়ার শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের লোকজন স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৮ বছর ধরেই।’

শুক্রবার বিকালে সরজমিনে গেলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লীর দুর্ভোগের শিকার পরিবারের লোকজন জানান, উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চেংগ্নী গ্রামের হতদরিদ্র পাঁচ পাড়ায় লোকজনের জন্য সরকারি ভাবে টিউবওয়েল কিংবা গভীর কুয়ো তৈরী করে না দেয়ায় তাদের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।’ গ্রামে স্বচ্চল পরিবারের লোকজনের সুবিধামত নিজ নিজ বাড়িতে কয়েকটি টিউবওয়েল থাকলেও দিন আনেন দিন খেয়ে পড়ে আছেন এমন হতদরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী লোকজন। ব্যক্তিগত সামর্থ না থাকায় তারা নিজেদের একটি পাড়াতেও বসাতে পারছেন না বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল কিংবা একটি গভীর কুঁয়ো।

উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের টিলাঘেরা চেংগ্নীর টেংরা টিলাপাড়া, বাঙ চাকুয়া, বাতানগ্রী, কনকোণা, ধলধলাসহ পাঁচ পাড়ার লোকজন তাদের পানি দুভোর্গের কথা জানাতে গিয়ে বললেন, এক সময় পাড়ার লোকজন ওপারের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা চেংগ্নী ছড়ার ময়লাযুক্ত পানিই কাপড় দিয়ে ছেঁকে কোন রকম পরিস্কার করে পান করতেন।

ধীরে ধীরে স্বচ্চল পরিবারের লোকজন সুবিধা থাকায় গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে টিউবওয়েল বসিয়েছেন কিন্তু সেগুলোতেও রয়েছে আয়রণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত।’ অপরদিকে আর্থিক সুবিধা না থাকায় পাড়ার লোকজন নিজেরা হাজার দু’হাজার হাজার টাকা সংগ্রহ করে বনবিভাগের টিলার নিচে তিনটি পাঁকা চাঁকায় প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর পুর্বে কোন রকম একটি কুঁয়ো (ইন্দরা) বসিয়ে খাবার পানিসহ পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজনে পানি সংগ্রহ করে যাচ্ছেন।

উপজেলার চেংগ্নী’র বাতানশ্রীপাড়ার ফাতেমা হাগিদক (৬৫) বললেন, এই তিন চাঁকার কুয়োতে বছরের কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৬ মাস পানিই থাকেনা, শুঁকিয়ে যায়, কারণ কুয়োটি গভীর নয়, এ কারণে বছরের বাকি ছয় মাস চেংগ্নী ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে হয় তাও এক সময় ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফকে বলে কয়ে ছড়ার উৎস মুখ জিরো লাইন থেকেও পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়।

একই গ্রামের টেংরা টিলাপাড়ার প্রয়াত জিনেং রিছিলের স্ত্রী শতবর্ষী জেমদিনী রাকসাম অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে নিজেদের গারো (মান্দি) ভাষায় টিলার ওপর বসেই সম্প্রতি বলছিলেন ‘সতব্রিশনী বিলছি নাম্মাচিক রিংমানজাজক’’ (অর্থাৎ) ৪৮ বছরেও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলাম না)।’

চেংগ্নী মাতৃমণ্ডলীর পাষ্টার গিজিয়ন চিসিম (৬৫) বললেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ অনেকের কাছে ধর্ণা দিয়েও এ এলাকার লোকজনের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে একটি টিউবওয়েল কিংবা একটি গভীর কুঁয়োর ব্যবস্থা আজো করা গেলনা।

উপজেলার চেংগ্নী টেংরা টিলাপাড়ার সুবিনাথ সাংমা (৫৫) বললেন, একটি তিন চাঁকার কুয়ো থেকে পানি সংগ্রহ করছে পাঁচ পাড়ার আবাল বৃদ্ধ বণিতাকে লাইন ধরতে হয়, আবার কুয়োয় পানি না থাকলে সেই সীমান্তের জিরো লাইন থেকে তৈলের টিন, কলসী না হয় বালতি জোড়ায় পানি ভড়ে ঘাড়ে বয়ে আনতে হয়।’ তিনি আরো বলেন , কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি উদ্যোগী হয়ে একটি টিউবওয়েল বা গভীর কুঁয়ো বসিয়ে দিতেন এ পাচঁ পাড়ার লোকজনের বিশুদ্ধ পানির দুর্ভোগ দূর হয়ে যেত।

উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভুঁইয়ার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেংগ্নীর ওই এলাকায় পানির দুর্ভোগের বিষয়টি পরিষদ অবহিত আছেন স্বীকার করে বললেন, আসলে ওখানে প্রায় হাজার ফুট গভীর নলকুপ বসাতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যায় বহুল, মাটির নিচ থেকে পাথর সড়িয়ে যদিও বিকল্প হিসাবে একটি গভীর কুঁয়ো বসানো যায় তাতেও ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যায় হবে।’ তিনি আরো বলেন, সরাসরি উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই কেবল দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় পানির সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেনের নিকট এ বিষয়ে স্ববিস্তারে জানিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, এটা আমার জানা ছিল না। এ বিষয়টি আমাকে অবহিত করা মাত্রই আমি খোঁজখবর নিয়েছি। এলাকাটি সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা। মাটির নীচে পাথর থাকায় এখানে অগভীর নলকূপ বসানো যায় না এমনকি গভীর নলকূপ বসানোও খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

ওই এলাকার জন্য কেবলমাত্র জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে যে রিংওয়েল বরাদ্দ দেয়া হয় তা প্রযোজ্য হবে। আমরা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড