• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জীবন যুদ্ধে হার না মানা গাংনীর প্রতিবন্ধী বিধবা নুরজাহান

  এ সিদ্দিকী শাহীন, গাংনী প্রতিনিধি

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩৯
মেহেরপুর
ছাগলগুলো পরিচর্যা করেছেন নুরজাহান

জীবনের শুরুটা তার খুব একটা সুখকর ছিলনা। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর প্রথম স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে তাদের সংসারে আসে ৩ মেয়ে ১ ছেলে। অভাবের সংসারে সে স্বামীও দীর্ঘ সময় তার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। এভাবে কষ্টের জীবন চলতে থাকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ফিল্ড পাড়ার জীবন যুদ্ধে হার না মানা শারীরিক প্রতিবন্ধী এক মধ্যবয়সি বিধবা নারী নুরজাহানের জীবন।

তাঁর ডান হাতের কনুই থেকে নিচের অংশ অসার তাই তিনি ডান হাত দিয়ে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। দ্বিতীয় স্বামী আজগর আলি তাকে না জানিয়ে চলে যাওয়ার পর নুরজাহান বেগম সন্তানদের নিয়ে সংসারে অবহেলার পাত্রে পরিণত হন। সকলে তাকে অবজ্ঞা করতে থাকে। ‘কিন্তু জীবনতো আর থেমে থাকবেনা, সন্তানদের বড় করতে হবে’ এমন চিন্তায় তাকে সব সময় অস্থির করে তুলতো।

সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি কাজ করত। তাতে তিনি কোনো রকমে খাবার ব্যাবস্থা করতেন এর মধ্যেও তিনি মুষ্টির চাল জমা করতেন ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

নুরজাহান বেগম দৈনিক অধিকারকে জানান, মুষ্টের চাউল আমার ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। নুরজাহান বেগম জানান, মুষ্টির চাউল বিক্রি করে প্রথমে একটি মুরগি ক্রয় করে তা লালন পালন করেন এবং তাতে তিনি বেশ কিছু মুরগি বাড়িয়ে ফেলেন। মূলত এখান থেকেই তার উন্নয়নের সূচনা হয়।

মুরগি বিক্রয় করে তিনি একটি পাটি (নারী) ছাগল ক্রয় করেন এবং কাজের ফাঁকে তিনি তা লালন-পালন করতে থাকেন। নুরজাহান বেগমের একটি ছাগল থেকে আবারো দুটি পাটি ছাগলের বাচ্চা জন্ম নেয়।

নুরজাহান বেগম জানান, যখন তিনটি ছাগল হয়ে গেল, তখন তার মাথায় আসে এখান থেকে আরো ছাগল বাড়ানো সম্ভব। এ কথা চিন্তা করে তিনি আস্তে আস্তে ছাগল উৎপাদনে সময় বেশি দেন এবং বেশির ভাগ সময় ব্যায় করেন ছাগল পরিচর্যায়।

তার ছাগল লালন পালন দেখে অনেকেই তাকে বলত ‘ওসব করে কি আর পেটে ভাত হবে চল মুনিষে যাই বিকেল হলেই মুড়ি খেতে খেতে বাড়ি চলে আসব। তাদের উত্তরে নুরজাহান বেগম বলতেন,নিজের কাজ নিজে করব এতে লজ্জা কিসের।

তিনি বলেন না খেয়ে অনেক সময় আমি আমার ছাগলগুলোর পরিচর্যা করেছি। নুরজাহান বেগম বলেন, আমার একটাই চিন্তা ছিল অভাবের যন্ত্রণা আমি আমার সন্তানদের বুঝতে দেবনা। সে থেকে তার ধ্যান- জ্ঞান ছিল ছাগল উৎপাদনের দিকে। এখন তিনি সফল।

ইতোমধ্যে তিনি ৯ লক্ষ টাকার ছাগল বিক্রয় করেছেন। নুরজাহান বেগম ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে তার সন্তানদের বড় করেছেন বিয়েও দিয়েছেন এমনকি তার নাতি নাতনিদের লেখাপড়া ও বিয়ে সম্পন্ন করেছেন এই ছাগল বিক্রয় করে। বর্তমানে নুরজাহান বেগমের ৫২টি ছাগল রয়েছে।

তার স্বাক্ষাত নেওয়ার সময়ই এ প্রতিবেদকের সামনে একটি ছাগির দুটো নতুন ছাগল প্রসব করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন এভাবেই মাঝে মাঝে আমার ছাগলের পাল থেকে নতুন অতিথি আসে।

তিনি জানান স্রষ্টার দয়ায় এখন আমার আর কোনো অভাব নেই। আমার সন্তান নাতি-নাতনিরা শান্তিতে থাকলেই আমার শান্তি। এই বয়সে এখনো ছাগল পরিচর্যা করেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ছাগলের সাথে আমার এক ধরনের মায়া হয়ে গেছে। এদের ছাড়া আমি থাকতে পারিনা এরা আমার সন্তানের মতো-সন্তানের মতো করেই আমি এদের বড় করি দেখাশুনা করি।

নুরজাহান বেগম জানান, প্রতি মাসে চার থেকে ছয়টা নতুন অতিথি যোগ হয় আমার ছাগলের পালে। তিনি জানান এখন আমার আর কোনো অভাব নেই আমি এখন সফল। নুরজাহান বেগমের স্বপ্ন তার সন্তানরা যেন কোনোদিন অভাবে না থাকে এবং তারা যেন সুখে শান্তিতে তাদের দিন কাটাতে পারে।

অডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড