দুর্নীতির বোঝা সইতে না পেরে ভেঙে পড়ল বিদ্যালয়ের ছাঁদ

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ শেষ হাওয়ার পূর্বেই ভেঙে পড়ল এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাঁদ। তড়িঘড়ি করে সরিয়ে ফেলা হয় ভেঙে পড়া ভবনের নির্মাণ সামগ্রী।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় অসন্তোষ ও সুধী মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অফিস সূত্রে জানা যায়, (এনবিআইডিজিপিএস-১) এর অধীনে আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ২৯ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে নির্মাণের শর্তে মেসার্স আমিন ট্রেডার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজটি পায়। সে অনুযায়ী গত বছরের ৩ জুন উক্ত প্রতিষ্ঠান আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজটি চলতি মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলেও অফিস সূত্রে জানা যায়।

আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে দ্বিতল ভবনের কাজ শুরু করেন ২০১৮ সালের ৩ জুন। দ্বিতল ভবনের এক তৃতীয়াংশের কাজ শেষ হওয়ার পর শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উক্ত ভবনের ছাদ ভেঙে পরে। এ সময় ঠিকাদারের নির্মাণ শ্রমিকরা তড়িঘড়ি করে ভেঙে পড়া ছাদের অংশ সরিয়ে ফেলেন। বিদ্যালয় ভবনের ছাদ ভেঙে পড়ার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র এলাকায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করে। উপজেলা প্রকৌশলী শাহীনুর রহমান ভেঙে যাওয়া ওই ভবন পরিদর্শন করেনি বলেও অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলার কাজ প্রায় ছয় মাস যাবত ধীর গতিতে চলছে। ওই ভবনের নির্মাণ কাজ বেশির ভাগ সময় রাতে করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নির্মাণ কাজে নিয়োজিত থাকা তদারকি কর্মকর্তা (এস ও) মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের কাজ দায় সাড়া ভাবে দেখা শুনা করার অভিযোগ করে এলাকাবাসী।

এছাড়া ওই ছাদে ভীম না করে শুধু কলামের উপর নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ছাঁদ ঢালাই করার ফলে উক্ত ছাঁদ ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সহকারী প্রকৌশলী (এস ও) মাইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাঁদ ভেঙে পড়ার কথা জানতে পেরেছি। কি কারণে ছাঁদ ভেঙে পরল তা খতিয়ে দেখব।

ভেঙে পড়া আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাঁদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা কমিটি এবং গ্রামবাসী বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর আগে ভাল করে কাজ করার কথা বললে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বলেন, ইতোপূর্বে উক্ত ভবনের নিচ তলা যে ভাবে কঠিন (মজবুত) করে কাজ করেছে আমরা দ্বিতল ভবনের কাজ এতো কঠিন (মজবুত) ভাবে করব না। আমরা দ্বিতল ভবনের কাজ নরমাল ভাবেই করে যাবো। সেলিম রেজা আরও বলেন, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় ভবনের ছাদ ভেঙে পড়েছে বলে মনে হয়।

আগতাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন ট্রেডার্সের কর্তৃপক্ষ সুমনের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহীনুর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কোন প্রকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সব বিষয়ে অফিস প্রধানদের মতামতের প্রয়োজন নাই।

তবে কনষ্ট্রাকশন কাজের ভুলত্রুটি হতেই পারে এটা কোন ব্যাপার না। ভুলত্রুটি হলে তা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সমাধান করবে।

ওডি/এএসএল