• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাণীনগরে ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে পাঠদান

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

২৪ মার্চ ২০১৯, ২০:০১
নওগাঁ
ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা

দূর থেকে দেখলে মনে হবে ফাঁকা মাঠের মধ্যে রাস্তার পাশে হয়তো বা কোনো সাপ্তাহিক হাট বসার জায়গা। যেখানে সপ্তাহে একদিন কিংবা দুই দিন হাট বসে। গাছের নিচে ইটের পুরাতন কক্ষের প্রাচীর কোথাও ভেঙে গেছে আবার টিনের ছাউনির কোথাও টিন উড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে।

কিন্তু এটি একটি বিদ্যাপীঠ। এটি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে আগামীর প্রজন্মরা বিদ্যা গ্রহণ করে। বিদ্যালয়টিতে কক্ষ সংকটের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কোনো নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ের সব কিছুই থাকে নিরাপত্তাহীনতায়।

পরিত্যক্ত এই ভবনগুলো যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকার কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বার বার অবগত করেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর জানান, ১৯৯৭সালে এই অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী কজন ব্যক্তিদের চেষ্টায় এই বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু। সেই সময়ে এখানে ইট ও টিনের ছাউনি দিয়ে ৪টি কক্ষ তৈরি করে শুরু করা হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফলে কোনো ফেল নেই এবং প্রতিবছর এই বিদ্যালয় থেকে একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকে।

অবহেলিত এই অঞ্চলে অনেক বছর জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসলেও এখনো এই বিদ্যাপীঠটটিতে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে এই বিদ্যাপীঠ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্ষ সংকট। কক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত কক্ষেই গাদাগাদি করে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে একটি একতলা ভবন পেলেও দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না করায় তার অবস্থাও বর্তমানে খুবই নাজুক।

বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করছে। বিজ্ঞানাগার না থাকার কারণে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বৈজ্ঞানিক উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের জন্য নেই আলাদা কক্ষ। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষ পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

এছাড়াও ঝড়ের মৌসুমে থাকে চরম নিরাপত্তাহীনতা। কারণ কখন ঝড় এসে কক্ষের টিনের ছাউনি উড়ে নিয়ে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঝড়ে পরিত্যক্ত মাটির ভবনের টিনগুলো উড়ে যাওয়ায় বার বার বিপাকে পড়তে হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার, ফাইম শাহরিয়ার রিজভীসহ অনেকেই জানায়, আমরা কক্ষের অভাবে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠ গ্রহণ করছি। এছাড়াও বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর, মেয়েদের জন্য নেই কমন ও ওয়াশরুম, আধুনিক মানসম্মত বহুতল ভবন, নেই শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব ও গ্রন্থাগার। যার কারণে আমরা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যুগোপযোগী অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করতে পারছি না।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক শুকবর আলী বলেন, আমরা অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর এই সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। যদি এই পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে সম্প্রসারণ করে আধুনিকমানের ভবন নির্মাণ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে পারবে। ফলে এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার মানুষের মাঝে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং ঝরে পড়া অনেক কমে যাবে ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, এই বিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। আশা রাখি, এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড