রাজবাড়ী প্রতিনিধি
‘নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ এতদিন এমনটাই জানা ছিল বাংলাদেশের মানুষের। অথচ রাজবাড়ীতে যে কয়েকটি নদী রয়েছে তার কোনটিতেই এখন আর পানি থাকেনা। শীতের প্রথমে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ থাকলেও শুকনো মৌসুমে এ নদীগুলোতে আর পানি পাওয়া যায় না বলে দাবি স্থানীয়দের।
রাজবাড়ী জেলাটি নদীমাতৃক হওয়ায় নদীর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের। নদী তীরবর্তী জনসাধারণের এই নদীগুলোকে ঘিরেই বসবাস ও জীবন যাপন।
প্রতিবছর বন্যা ও ভাঙ্গনের ফলে প্রচুর পরিমাণে পলি পরে পদ্মা ও গড়াইসহ সব নদীগুলো তাদের নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। যে কারণে নদী থেকে আগে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত তা এখন আর পাওয়া যায়না। ফলে বর্তমানে জেলেদের কষ্টে দিন চলছে। এসব নদীকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো আবারও রাজবাড়ীর এসব জলভূমিকে খনন করে চলাচলের উপযোগী করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে, রাজবাড়ীতে উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, গড়াই, চন্দনা, হড়াই ও কুমারসহ অন্যান্য সব ছোট নদীগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে এখন আর পানি থাকেনা। প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রচুর পরিমাণে পলি ও বালি মাটি এসে এসব নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
যে কারণে পানি প্রবাহ ও যান চলাচলে নদীর গতিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার রয়েছে এবং আর বাকি নদীগুলোর আয়তন রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৬শ ৫৪ হেক্টর বিস্তৃত। অথচ এখন আর আগের মত জৌলুস না থাকায় কোনো রকমে চলছে এই নদীগুলোর প্রবাহ।
এদিকে এলাকাবাসী ও জেলেরা বলেন, ‘এক সময় এ নদী অনেক গভীর ছিল এবং প্রচুর পানি থাকায় এখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যেত।এখন পলি পরে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় আগের মত আর মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ও নদী ভাঙ্গনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।’
তাদের দাবি, নদী আবারও খনন করা হলে পানি ও মাছ পেতে আর কোনো সমস্যা হবেনা। যে কারণে সরকারের প্রতি পুনরায় এর খনন কাজ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অপরদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিনুর রহমান বলেন, ‘নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো পলি পরে প্রচুর পরিমাণে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে মৎস্য উৎপাদন কমে গেছে। তবে মাছের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে পলি পড়া জলাশয়গুলোকে পুনঃখনন করতে হবে। পানি না থাকায় মাছের চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে, চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মাছ উৎপাদনে। তবে ইলিশ মাছের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে ব্যাপক আকারে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নদী খনন করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলাটি পদ্মা ও গড়াই নদী বেষ্টিত একটি অঞ্চল। এ জেলাটির একপাশ দিয়ে পদ্মা ও অন্য পাশে গড়াই নদী প্রবহমান রয়েছে। তবে এ দুটি নদী ভাঙ্গনে রাজবাড়ী জেলাটি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। প্রতি বছরই এ জেলার পাঁচটি উপজেলাতে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বন্যায় প্রচুর পরিমাণ পলি মাটি এ দুটি নদী বয়ে আনে জমিগুলো উর্বর হয় এতে ফসলের আবাদ ও উৎপাদন ভালো হয়।’
তবে এর সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উজান থেকে প্রচুর পরিমাণ পলি মাটি ও বালি এসে নদী গর্ভে স্তূপ আকারে এসে প্রতিনিয়ত চর পড়ে যাচ্ছে এবং নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি নদীতে থাকার কথা সে পরিমাণ পানি থাকছে না যে কারণে বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘এই নদীগুলোকে বাঁচাতে পারলেই দেশকে বাঁচানো সম্ভব এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতি বছর ড্রেজিং করার প্রয়োজন। এতে নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়বে, পানি প্রবাহ সঠিকভাবে থাকবে এবং বর্ষা মৌসুমে আমরা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাব। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যে পানি থাকবে তা দিয়ে সেচ কার্যসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যাবে।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড