কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাওডাঙ্গার জমিদার বাড়ি। বর্তমানে বাড়িটি অরক্ষিত, বেহাত হয়ে গেছে অনেক সম্পদ। ইট, চুন সুড়কির নিপুণ গাথুনির ভবনগুলো এখনও মনে করিয়ে দেয় সেকালের কথা।
ভারতীয় উপমহাদেশে তৎকালীন নাওডাঙ্গা পরগনার জমিদার বাহুদুর শ্রী যুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বকসী বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার শাসনআমলে এই পরগণার অধিন বিদ্যাবাগি, শিমুলবাড়ী, তালুকশিমুলবাড়ী, রসুন শিমুলবাড়ী, কবিরমামুদ প্রভৃতি জায়গায় শান্তির সুবাতাস ছিল।এটি দেখাশোনার পূর্ণ পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল যুক্ত বাবু বসীর ওপর।
কুমার বাহাদুর বীরেশ্বর প্রসাদ বসী, বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ও বিপুলেম্বর প্রসাদন বকসী এ ৩ জন জমিদার ছিলেন। মেয়ে ছিল পুটু। বিয়ে হয় রংপুর মীরবাগের জমিদারের সাথে। তার প্রথম পুত্র বীরেশ্বর প্রসাদ বকসী পাশ্চত্যে পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কলকাতায় আইন পেশায় কর্মময় জীবন আরম্ভ করেন। সে একজন ন্যায় বিচারক ছিলেন। তৃতীয় পুত্র বিপুলেম্বর প্রসাদন বকসী ছিলেন প্রকৌশলী। দ্বিতীয় পুত্র বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসীর হাতে জমিদারী ভার ন্যস্ত করে জমিদার প্রমদা রঞ্জন অবসর নেন।
কথিত আছে, পরবর্তী জমিদার জমিদারী ভার গ্রহণ করার আগে তৎকালীন সময়ে পর পর তিনবার প্রবেশিকা পরিক্ষায় অকৃতকার্য হন। তার পিতা জমিদার প্রমদা রঞ্জন বকসী তার পুত্রকে বলেন, তোমার ভাগ্য ভালো তাই। অনেক ভাগ্য গুণে তুমি আমার সন্তান হিসেবে জন্ম নিয়েছ। বাকিরা যেহেতু পড়ালেখা শিখে অন্য কিছু হতে চায় সেহেতু তোমাকেই আমি আমার জমিদারী ভার দিতে চাই। পরে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সে আমলে সেখানে তিনি একটি মাইনর স্কুল গড়ে দেন। সেটি এখন নাওডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিতি।
পাশে রয়েছে নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ। শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতির প্রতি জমিদার বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ছিলেন অনুরাগী। ভগোবান পূর্ণ জন্ম তিথি প্রতি দোল পূর্ণিমায় বাড়ীর সামনে বিস্তৃর্ন ফাকা মাঠে দোলের মেলা বসত। দোলসওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে সিংহাসন নিয়ে এই দোলের মেলায় অংশগ্রহণ করত। যা এখনও বর্তমান। ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দ সনের ভূমিকম্পের পরে অন্য দুই ভাই কুচবিহারে স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি বাড়ি ক্রয় করেন।
জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর সব কিছু ছেড়ে ভারতে চলে যান। জমিদার বাড়ির গোমস্থাগঙ্গাধর বর্মন এর নাতি রমেশ চন্দ্র বর্মন (৮৬) বলেন এসব কথা। তিনি বলে ঠাকুরদার নিকট থেকে শুনেছি এসব কথা। সূত্র অনুযায়ী তার পিতার মৃত্যুর পর জমিদার বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ও তার বংশধররা শ্রদ্ধানুষ্ঠা উপলক্ষ্যে সর্বশেষ এসেছিলেন নিজের বাড়ীটাকে শেষ দেখা দেখতে। সেই শেষ। আর কেউ কখনও নাওডাঙ্গায় আসেননি। আট দেয়াল বিশিষ্ট শিবমন্দিরটির উচ্চতা ৩০ফুট ব্যাস ২০ ফুট ও মন্দিরের ভিতরের ব্যাস ১২ফুট । জমিদারের আমলে শিব মন্দিরে পূজা হত খুবেই জাকজমকপূর্ণ ভাবে। শিব মন্দির সংলগ্ন একটি দিঘি। পশ্চিমে রয়েছে আরও একটি দিঘি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাজার বসিয়েছেন জমিদার বাড়ীর সামনের দোলের মেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে জমিদার বাড়ীর ভিতরে এক কোনায় দুর্গা মন্দির নির্মাণ করে পূজা অর্চনা করেন। সব মিলিয়ে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড