• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রক্তে লাল বাঘাইছড়ি! দায়ী কারা?

  এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

১৯ মার্চ ২০১৯, ১৭:৫৪
বাঘাইছড়ি
হামলার শিকার রক্তে রাঙ্গানো গাড়িটি

উপজেলা নির্বাচনি সহিংসতায় ২ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকসহ অন্তত ৭জন খুন হয়েছে। তারা সবাই সরকারি কাজে উপজেলা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই, কংলাক ও মাচালং থেকে নির্বাচনী ডিউটি শেষ করে ফেরার পথে উপজেলার ৯ কিলোমিটার এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে খুন হয়েছেন তারা ৭জন। রক্তাক্ত বাঘাইছড়ি! এবং এই ৭ খুনের দায়ভার কে নেবে সুদর্শন নাকি বড়ঋষি? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

অনেকের প্রশ্ন নির্বাচনি সরঞ্জাম নিয়ে আসার সময় নিরাপত্তাবাহিনী কোথায় ছিল? যদি নিরাপত্তাবাহিনী যদি সাথে থাকে তা হলে সন্ত্রাসীরা কি ভাবে পালিয়ে গেল? সন্ত্রাসীরা কি করে এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেল? এত সাহস পেল কোথায় তারা? ঘটনার ২৪ঘন্টা পেড়িয়ে গেলেও কেউ গ্রেফতার হলো না কেন?

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। নিতহদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী এই ঘটনার জন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস ও প্রসিত খীসা গ্রুপ মূল দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিভ ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)কে দায়ী করেছেন।

নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এই বর্বরতা রচিত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারসহ নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তারা বলেন, এই ঘটনার দায়ভার নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা। আজ এই ২জনের আধিপত্য লড়াইয়ের কারণেই নিরীহ লোকজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন : (রাঙ্গামাটিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন যারা)

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ২৯৯ নং আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বার বার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলে আসছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়াতে আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসী কর্তৃক ৭ হত্যাকাণ্ড ও বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগ সভাপতি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সাথে সাথে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনাসহ শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মীরা ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় ৭জন নিহতের ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(এমএন লারমা) সংস্কার সমর্থিত প্রার্থী সুদর্শন চাকমা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে স্থানীয় গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঘটনার শোক জানিয়ে সুদর্শন চাকমা বলেন, ভোটের দিন সাজেক থেকে ফেরার পথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা)ও ইউপিডিএফ মূল (প্রসিত) দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান। এই ঘটনা ও হামলার সাথে জড়িত এবং নিদের্শদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে বাঘাইছড়িতে ৭ হত্যাকাণ্ড ও মঙ্গলবার সকালে বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগ সভাপতি হত্যার ঘটনায় সরাসরি জেএসএসকে দায়ী করে জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।

তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত লেখেন কেন? তাদেরকে আপনারা ভয় পান নাকি? আপনারা সরাসরি জেএসএস ও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী বলে টিভি ও পত্রিকায় লিখতে পারেন না? পাহাড়ে তারা একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছেন যা প্রশাসন দেখে ও না দেখার ভাবধরে আছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীল উৎপল চাকমা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে প্রবাহিত করার জন্য আওয়ামী লীগ এধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, বাঘাইছড়িতে ৭জন হত্যা ও বিলাইছড়িতে সুরেশ কান্তি তঙ্গার হত্যাকান্ডের সাথে জেএসএসের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

আরও পড়ুন : (ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে ৬ জনের লাশ)

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিভ ফ্রন্ট (ইউপিডিএফের) কেন্দ্রীয় নেতা মাইকেল চাকমা বলেন,সারা দেশেই নির্বাচনি সহিংসতায় লোকজন মারা যায়। এখানেও সে রকমই ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন তদন্ত করলেই তা বেরিয়ে আসবে। যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। এখানে এক তরফা ভাবে ইউপিডিএফকে দায়ী করলে কি হবে। এ ঘটনার সাথে ইউপিডিএফের কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

মঙ্গলবার সকালে বাঘাইছড়িতে নির্বাচনি সহিংসতায় নির্বাচন কর্মকর্তাসহ নিহত ৭ মরদেহ দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়েছেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.হামিদুল হক, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার মো.আলমগীর কবীর। তারা নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং নিহতদের পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানান। এছাড়াও দোষীদের গ্রেফতার করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নিদের্শ প্রদান করেন।

বাঘাইছড়িতে নির্বাচনি সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নূরুল হুদা, চট্টগ্রাম বিভাগের সেনা জিওসি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। ইসি বলেন, যারা নির্বাচনি সহিংসতা ঘটিয়েছে যে কেউ হউক না কেন তারা ছাড় পাবেনা। তাদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীকে নিদের্শ দেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড