• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাবনার বিলচান্দক গ্রামের অধিকাংশ লোক পালিয়েছে

  পাবনা প্রতিনিধি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:৫৫
পাবনা
ঘড়ের জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছেরে চলে যাচ্ছে এক বৃদ্ধ নারী

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বিলচান্দক গ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে দু’গ্রুপের মারামারির জের ধরে লুটপাট ও পাল্টা লুটপাট চলছে। এদের এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রহমত মন্ডল আর অপর গ্রুপে আনসার আকন্দ(লালু আকন্দ)। লাগাতার সংঘর্ষে সাধারন জনগণের মধ্যে ভয়াবহ আতংক ও নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত লোকজন প্রাণের ভয়ে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে। বৃহস্পতিবার(২১ ফেব্রুয়ারি ) দু’পক্ষের লোকজনকে নিয়ে মিমাংসায় বসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) ফজল-ই-খোদা। এর পরও জনমনে আতংক কাটছে না।

গ্রামের লোকজন সাহসী আর দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। হিংসা-মারামারি তাদের নেশা। শিক্ষিত, সচেতন লোক কম। এ গ্রামের দু’গোষ্ঠির অর্থ-পিশাচ, নৃশংস, নিষ্ঠুর দু’নেতা রহমত মন্ডল ও আনসার আলী আকন্দের(লালু আকন্দ)।

১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোর পর্যন্ত উভয় পক্ষের লোকজনের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, লুটপাট, নারী-পুরষ, শিশু বৃদ্ধদের মারধোর ইত্যাদির কারণে গ্রামের ৮০ ভাগ লোক-জন এলাকা ছাড়া হয়েছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দিঘুলিয়া বাজারে ঢুকতেই দেখা যায় গ্রামের নারী-পুরুষ যুবক-যুবতীরা তাদের ল্যাপ-কাঁথা,আসবাবপত্র হাঁিড়,পাতিল,থালা-বাসন,গরু-ছাগল নিয়ে একাত্তুর কিংবা সেই রহিঙ্গাদের স্রোতের মত রাস্তা দিয়ে সারি-সারি উর্দ্ধাশ্বাসে জীবন-মান বাঁচাতে ছুটে চলেছে। ঘটনার সুত্রপাত যেভাবে গত প্রায় ২ মাস আগে আনসার আকন্দ গ্রুপের এনামুল হকের মেয়ে(৮ম শ্রেণির ছাত্রী)কে রহমত মন্ডল গ্রুপের সাদত আলীর ছেলে আউয়াল হোসেন জোর করে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় এনামুল হক বাদি হয়ে মামলা করলে পুলিশ রহমত গ্রুপের লোকজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।

এ ঘটনার জের হিসেবে রহমত মন্ডলের লোকজন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে আনসার আকন্দ গ্রুপের , ৮ জনের বাড়ি-ঘর ভাংচুর,লুটপাট ও লোকজনকে মারিপিট করে। এসব ঘটনায় মামলা- পাল্টা মামলা এবং লুটপাট ও পাল্টা লুটপাট শুরু হয়। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে উভয় গ্রুপের শতাধিক বাড়ি লুটপাট হয়।

বর্তমান অবস্থা বুধবার(২০ ফেব্রুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার(২১ ফেব্রুয়ারি) বিল চান্দক গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ, যুবক,শিশু,বৃদ্ধ তাদের লেপ-কাঁথা, আসবাবপত্র হাঁড়ি,পাতিল,থালা-বাসন, টিভি, ফ্রিজ, এমন কি সিলিং ফ্যান, গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলেছেন।

মনে হয়েছে একাত্তর সালের সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা। তারা জীবন মান বাঁচাতে ছুটে চলেছেন। অন্তত ১৫ জনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে কেন এভাবে ছুটছেন? উত্তর একটাই- আগে জীবন বাঁচাই।

গ্রাম ছেরে চলে যাচ্ছে মানুষ

গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কম্পিত কন্ঠে বললেন, ‘পুলিশের কোন লোক নাকি বলেছে, দুই নেতা এক হয়ে গ্রামে শান্তি না ফেরালে সবার বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। এ খবর শুনে গ্রামের সবাই তাদের জিনিস পত্র নিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।’

গ্রামের বিলচান্দক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুল ভীত ও কম্পিত কন্ঠে বললেন ভাই কোন কথা বলতে পারব না। ঘরের বেড়ারও তো কান আছে। শুনলেই আমার বাড়ি ভাংচুর লুটপাট হবে।

গ্রামের ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় অধিকাংশ বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে কোন লোকজন নেই। গ্রামের একমাত্র বাজার বন্ধ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছে কোন শিক্ষার্থী নেই। দু’চার জন থাকলেও সাংবাদিকদের সাথে কেউই কথা বলতে রাজি হয়নি।

খোজ নিয়ে জানা গেলে, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আনসার আকন্দের কোন লোকজন গ্রামে নেই। রহমত মন্ডল ও তার কিছু লোকজন গ্রামে রয়েছে। তাদের চোখে মুখেও আতংকের ছাপ।

ফরিদপুর থানার ওসি তদন্ত হাদিউজ্জামান ও পাবনা ডিবি’র ওসি দেলোয়ার হোসেন সহ পুলিশ দলের উপস্থিতিতেই গ্রামের অধিকাংশ লোকজন সহায় সম্বল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল।

এ ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ‘কে বা কারা যেন গুজব রটিয়েছে রাতে গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। আমরা তাদের কোন ক্ষতি হতে দেব না এ কথা বলার পরও তারা থামছে না।’

খোজ নিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ৯৫ ভাগ পুরুষ আর ৯০ ভাগ মহিলা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

এদিকে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতের ভাংচুরের ঘটনার পরের দিন সকালে ফরিদপুর থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিলচান্দক গ্রামে যায়। তিনি উভয় পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি শালিসী বৈঠকে মীমাংসার কথা বলেন। কিন্তু এর আগেই ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তিনি মারা যান।

২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিঘুলিয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজে দু’পক্ষের লোকজনকে নিয়ে মিমাংসায় বসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) ফজল-ই-খোদা, ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার ও ফরিদপুর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান মাজেদ। রহমত মন্ডল ও আনসার আকন্দ একমত হয় তারা এখন থেকে মিলে মিশে চলবেন। উভয় পক্ষের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করে তা মিমাংসা করার জন্য ফরিদপুর থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড