কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আজ। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শুরু হবে এ অনুষ্ঠান।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। এছাড়া আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন এতে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। এছাড়া জেলার ৪ সংসদ সদস্য এতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা পুলিশের তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
এ নিয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে টেকনাফবাসীর কলঙ্কমোচনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যদি সেভাবে ইয়াবা কারবারিরা ফিরে আসেন। আবার অনেকে মনে করছেন প্রাণ বাঁচানোর জন্য মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করছেন। তারা আত্মসমর্পণ করলেও তাদের সহযোগীরা এখনও এই প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই যেন পুলিশ প্রশাসনের। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দফায় দফায় অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করছেন। কোথাও কোন ত্রুটি যেন না থাকে সে চেষ্টা করছেন। তাছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিতো রয়েছেই। অনুষ্ঠানস্থল টেকনাফ পাইলট হাই স্কুল মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে মাইকিং।
এদিকে টেকনাফ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান সফল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা কামনা করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ। শেষ মূহুর্তে নতুন করে আর কোন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণে যাচ্ছেন তা নিয়ে মানুষের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই। ইতোমধ্যে এমপি বদির ৩ ভাই, ভাগিনা, ফুফাত ভাইসহ ৭ জন আত্মসমর্পণের জন্য সেইফ হোমে রয়েছেন। শেষ মূহুর্তে আলোচিত হচ্ছে ইয়াবা কারবারের মূলহোতা সাইফুল করিম আত্মসমর্পণ করছেন কিনা তা নিয়ে। টেকনাফে আলোচিত হচ্ছে শীলবুনিয়া পাড়ার সাইফুল করিমের নাম। সাইফুল করিম আত্মসমর্পণ করছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর টেকনাফের সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল ছিল সাইফুল করিম আত্মসমর্পণ করেছেন কিনা তা জানার জন্য।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আত্মসমর্পণের জন্য সাইফুল করিম বর্তমানে দেশে রয়েছেন। কয়েকদিন আগে তিনি রেঙ্গুন থেকে টেকনাফে ফেরেন। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে তিনি আত্মসমর্পণের জন্য জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়ে আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাইফুল করিম সেইফ হোমে পৌঁছাননি বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রায় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী কক্সবাজারের সেইফ হোমে জড়ো হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যাদের অনেকের নাম রয়েছে ৭৩ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায়।
টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, শনিবার সকালে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য জেলা পুলিশের তত্বাবধানে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষের দিকে। শনিবার সকালে কক্সবাজার পুলিশের তত্বাবধানে থাকা শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি মো. জাবেদ পাটোয়ারী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমানে কক্সবাজারে রয়েছেন। তিনি শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিন পরিদর্শন শেষে বিকালে আবার কক্সবাজার ফিরে যান।
আত্মসমর্পণ করছেন যারা :
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন- টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা আবদুস শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান, বদির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, আরেক ভাগিনা টেকনাফ পৌর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূরুল বশর ওরফে নূরশাদ, মং সিং থেইন ওরফে মমসি, ফুপাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, মারুফ বিন খলিল বাবু, বদির বেয়াই সাহেদ কামাল, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের ছেলে দিদার মিয়া। টেকনাফের হ্নীলার ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল হুদা, টেকনাফ সদরের ৮ নং ওয়ার্ডের এনামুল হক এনাম মেম্বার, সাবরাংয়ের ১ নং ওয়ার্ডের মোয়াজ্জেম হোসেন দানু মেম্বার, হ্নীলার ৭ নং ওয়ার্ডের জামাল মেম্বার, সাবরাং ইউপির শাহপরীর দ্বীপের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিম রেজু মেম্বার, উত্তর আলী খালির শাহ আজম ও সাবরাং নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল লিটন, ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিমের দুই শ্যালক জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান। টেকনাফের পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, হ্নীলা সিকদারপাড়ার সৈয়দ আহম্মদ সৈয়দ, 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত নাজিরপাড়ার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের ভাই আবদুর রহমান, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটংপাড়ার ইউনুস, ডেইলপাড়ার জাফর আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলার রশিদ আহম্মদ ওরফে রশিদ খুলু, সদরের ডেইল পাড়ার আব্দুল আমিন ও নুরুল আমিন, টেকনাফ সদরের উত্তর লম্বরি এলাকার করিম মাঝি, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী। শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার সৈয়দ আলম, রাজাছড়ার আব্দুল কুদ্দুছ, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, জাহেলিয়াপাড়ার মোহাম্মদ সিরাজ, কচুবনিয়ার আব্দুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মোহাম্মদ রফিক, পল্লানপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম, নাইটংপাড়ার রহিমউল্লাহ, নাজিরপাড়ার মোহাম্মদ হেলাল, চৌধুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম, সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন। হ্নীলার পূর্ব পানখালির নজরুল ইসলাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকার নুরুল বশর ওরফে কালা ভাই, হাতিয়ার ঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার হাসান, সাবরাং নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদ, কচুবনিয়ার বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, জালিয়াপাড়ার জুবায়ের হোসেন, হ্নীলার পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
এদিকে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মাঝেও থেমে নেই সীমান্তের ইয়াবা পাচার। জেলাজুড়ে র্যাব, বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ১১ ব্যাটালিয়ন বিজিবির সাড়াশি অভিযানে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজির পাড়া নামক স্থানের একটি ছোট টিলার সাথে থাকা খামার বাড়িতে থেকে ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের ৪ লাখ ৪০ হাজার পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও একই সময় টেকনাফ বিজিবির অভিযানে টেকনাফের হ্নীলা ইউপিস্থ খারাংখালী লবণের মাঠ থেকে ৬০ টাকা মূল্যের পরিত্যক্ত ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে একইদিন দুপুরে গভীর বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ চার মাদক বিক্রেতাকে আটক করেছে কক্সবাজারে নবগঠিত র্যাব-১৫ এর সদস্যরা। এ সময় ইয়াবা পাচারকাজে ব্যবহৃত মাছ শিকারের একটি নৌকাও জব্দ করা হয়েছে।
অভিযান শুরুর পর কক্সবাজারেই নিহত ৪২ :
অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুধু কক্সবাজারেই ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফে নিহতের সংখ্যা ৩৯ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন টেকনাফের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে রয়েছে দুইজন জনপ্রতিনিধি। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। এদের মধ্যে অনেকে প্রাণ বাঁচাতে পথ খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়। এতে সরকার নির্মূলের জন্য কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিতে সম্মত হয়। এরপর গত ১০ জানুয়ারি থেকে ইয়াবা কারবারিরা কক্সবাজার পুলিশ হেফাজতে চলে যায়। এরপর থেকে শুরু হয় দল বেঁধে নিজেদের সমর্পণ প্রক্রিয়া। পরে ফেসবুকে জানান দিয়ে টেকনাফ সদরের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার এনামুল হক এক ঝাঁক ইয়াবা কারবারিসহ শো-ডাউনের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন।
র্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. মেহেদী হাসান বলেন, গভীর সমুদ্র দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান টেকনাফ হয়ে কক্সবাজারের দিকে আসছে, এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে আমরা সাগরে অভিযান পরিচালনা করি। একপর্যায়ে গভীর সাগরে মাছ শিকারের নৌকাগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় একটি নৌকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে নৌকা থাকা চারজনকে আটক করা হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড