• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রাথমিক পরবর্তী

সাতক্ষীরায় ৫৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার!

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০১
শহীদ মিনার
শহীদ মিনার (ছবি- দৈনিক অধিকার)

ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পার হলেও সাতক্ষীরা জেলার প্রাথমিক পরবর্তী পর্যায়ের প্রায় ৫৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালনের জন্য কখনো অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে আবার কখনো দিবসটিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে শহীদ দিবসে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা থেকে।

পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং জাদুঘর স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন। সে রিটের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট শহীদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশসহ ৮টি নির্দেশনা দেয়।

হাইকোর্টের দেওয়া সে নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা। কিন্তু হাইকোর্টের সে নির্দেশনার ৯ বছর পার হলেও সাতক্ষীরায় তার বাস্তবায়ন খুব বেশি হয়নি।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিক পরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে মোট ৫৭৫টি। যার মধ্যে ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০টিতেই শহীদ মিনার নেই। একইভাবে দেবহাটার ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪টিতে, আশাশুনির ৮০ প্রতিষ্ঠানের ৩২টিতে, কালিগঞ্জের ৬৯ প্রতিষ্ঠানের ৩৬টিতে, শ্যামনগরের ৮৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১টিতে, তালার ৯২ প্রতিষ্ঠানের ৩০টিতে এবং কলারোয়ার ৯২ প্রতিষ্ঠানের ৮০টিতেই নেই শহীদ মিনার।

এ পরিসংখ্যানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও নাজুক। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২০১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৩টি স্কুলে।

এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকটির শহীদ মিনারের অবস্থা আবার খুব ভালো না। এই তালিকায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের শহীদ মিনার সবার আগে। সাতক্ষীরার অন্যতম বৃহৎ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ভাঙন ধরেছে বেদিতেও। এর ওপর জুতা পায়ে অবাধ চলাচল করে স্থানীয় অনেকেই। মাঝে মাঝে এখানে আস্তানা গাড়ে বেদেরা। তারা জুতা পায়ে এ শহীদ মিনারের ওপর অবাধ বিচরণ করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, কিছুদিন হলো শহীদ মিনারটির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আমরা নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনেই নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যার কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। এজন্য ঐ শহীদ মিনারটি আর সংস্কার করা হয়নি।

শহীদ মিনার সম্পর্কে লাবসা ইমাদুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ অহমেদ রাজ বলেন, আমাদের স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি না। তবে স্কুলে শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‘নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার আহ্বায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর আর দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু দেশের শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতিফলকসহ শহীদ মিনার করা দরকার। কারণ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি প্রথম প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তাই বাঙালি জাতীর গৌরবময় এ অধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে এবং দিবসটি যথাযথভাবে পালন করার জন্য দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি অনেক স্কুল কলেজ ছুটি থাকে। এ দিন স্কুল কলেজ ছুটি না দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিবসটি পালন করলে শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবস সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে পারবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে আমরাও চাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। যাতে স্কুল পর্যায় থেকেই সকল শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড