কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারীতে হারানো মা-বাবার খোঁজে হন্যে হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক সুইজারল্যান্ড প্রবাসী রওফি। স্বামী ও প্রবাসী বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান করেও কোনো সূত্র না পেয়ে হতাশ পরিবারটি।
জানা যায়, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন তিনি। বিদেশে মানুষ হয়েছেন দত্তক সন্তান হিসেবে। কোনো কিছুর ঘাটতি রাখেননি সেই বাবা-মা। বড় হয়ে জানতে পারেন তার জন্ম বাংলাদেশে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকলেও জন্মস্থানের প্রতি একটা টান অনুভব করেন তিনি। এক সময় স্বামীকে বলেই ফেলেন আরাধ্য কথাটি। স্বামীও রাজি হলেন তার কথায়। তারপর বাংলাদেশে খুঁজতে এলেন হারিয়ে যাওয়া বাবা-মাকে।
তিনি এখন চষে বেড়াচ্ছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। তার সফরসঙ্গি ও অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে সাড়ে তিন বছর বয়সী রওফি উরফে খোদেজাকে উলিপুর উপজেলার থেতরাই বাজারে কাঁদতে দেখে বেসরকারি শিশু সংগঠন টেরেডেস হোমস তাকে নিয়ে যায়। সেখানেই ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ছিল সে। এরপর সুইজারল্যান্ডের রওফি পরিবার তাকে দত্তক নেয়। ছোট্ট বেলার স্মৃতি একটি সাদাকালো ছবি নিয়ে সে নতুন বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি দেয় জেনেভা শহরে।
সেখানেই সন্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করে জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে ২০০১ সাল থেকে কাজ করছেন। মা-বাবা হারানোর সময়ের স্মৃতি হিসেবে তার কোনো কিছু মনে নেই। শুধু একটি ছোটবেলার সাদাকালো ছবি আছে।
খোদেজা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পরাশোনা শেষ করে সেখানকার এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনোকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ৫ বছরের ইলিয়াস নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
খোদেজার সফর সঙ্গি হিসেবে ইনফ্যান্টস ডু মনডের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান জানান, প্রাথমিকভাবে আমাদের সোর্সদের কাজে লাগিয়ে আমরা খোদেজার মা-বাবা এমনকি তার স্বজনদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি। তবে কেউ যদি কখনো খোদেজার মা-বাবার পরিচয় দাবি করেন সে বিষয়ে আমরা সঠিক তথ্য উপাত্তসহ ডিএনএ টেস্ট করিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হব। কেননা আমরা চাই না এই সময় এসে খোদেজা কোনো প্রতারণার শিকার হোক।
অপর সফর সঙ্গি জেনেভা বাংলা পাঠশালার পরিচালক ও সুইস বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, খোদেজার সঙ্গে আমার পাঠশালাতেই পরিচয় হয়। সেখানে আলাপচারিতায় তার শৈশবের কথা জানালে আমিও তার মা-বাবার খোঁজে এসেছি। বিষয়টি খুবই জটিল। কেননা কোনো ডকুমেন্টস আমাদের হাতে নেই। তারপরেও যদি মিরাকল কিছু ঘটে।
স্থানীয় এনজিও কর্মী নুরুল হাবীব পাভেল জানান, সেই সময় কুড়িগ্রামে খুবই দুর্ভিক্ষ ছিল। তখনকার পরিস্থিতি দেখে চিলামারীর নুরন্নবী চৌধুরী, দেলোয়ার মাস্টার, ছমচ হাজীসহ অনেকেই একটি নোঙ্গর খানা খোলেন। পরবর্তী সময়ে টিডিএইচ নোঙ্গর খানাটি নেন। সেখানে ১২শ শিশু ছিল নোঙ্গর খানায়। প্রতি ৫০জন শিশুকে দেখার জন্য একজন করে টিম লিডার ছিল। খোদেজার টিম লিডার আনিছুর ছিলেন। সে খোদেজার ছবি দেখে চিনতে পেরেছে। তার মা-বাবার বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড