• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রকাশ্যে বাড়ছে ধূমপান

  আরিফ হোসেন, বরিশাল

২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৫
বরিশাল
ছবি : সংগৃহীত

বরিশাল নগরে গাড়িতে, বাড়িতে, হাসপাতালের বারান্দায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সর্বত্রই প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান। অনেক স্থানেই লেখা থাকে ‘ধূমপান মুক্ত এলাকা’। তারপরও সেসব স্থানগুলোতে চলছে ধূমপান। বরিশালের বিভিন্নস্থানে প্রকাশ্যে ধূমপানের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকার আইন করেছে প্রকাশ্যে ও পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা জরিমানা। প্রশাসনের লোকজনের উদাসীনতার কারণে এ আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

তারা আরও জানায়, এই আইন বাস্তবায়ন হবে কি না, সেই প্রশ্নই আমাদের। অন্য দিকে বরিশাল নগরের বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বরিশাল সরকারি আলেকান্দা কলেজের সামনে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর আড্ডায় মশগুল। প্রত্যেকের হাতেই একটি করে সিগারেট। প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ১৭ এর মধ্যে। কেউ কেউ মাধ্যমিক পাস করে কলেজের গন্ডিতে মাত্র প্রবেশ করেছে।

কাছে গিয়ে কথা বলতেই সবাই কিছুটা ভড়কে গেল। সদ্য সিগারেট ধরানোয় নিজের মধ্যে কিছুটা হলেও ভীতি কাজ করে। মনে হয় যেন পরিবারের কেউ দেখে ফেলছে।

সবুজ নামের একজনের কাছে জিজ্ঞেস করতেই বলল, শখের বসে সিগারেট খাই। বিশেষ করে এ বয়সে মেয়েদের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ কাজ করে। মেয়েদের বিশেষ নজর কাড়তেই এই শখের সিগারেটের মোহ বলে উল্লেখ করেন।

প্রকাশ্যে এভাবে সিগরেট খাওয়া আইনে নিষিদ্ধ, জরিমানার বিধান রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়-প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধের আইন সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তাছাড়া কেউ কখনো এ সম্পর্কে সচেতনও করেনি তাদের।

বরিশালে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের গেটের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল ৬-৭ জন যুবক। তারা কলাভবনের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র। ওখানে বেলা ১২ হলেই প্রতিদিন বসে আড্ডা। সিগারেট ছাড়া তাদের আড্ডা জমে না। কাছে গিয়ে পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, প্রকশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ আইন সম্পর্কে তাদের জানা আছে কি না।

সোহেল নামের এক ছাত্র উত্তরে জানায়, প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ জানা আছে। কিন্তু নিষেধটা করবে কে। সবাই প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। প্রকাশ্যে ধূমপানের অপরাধে কারও বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আইনের বাস্তবায়ন যখন নেই তখন প্রকাশ্যে ধূমপান করলে সমস্যা কোথায়। দেশে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধের মতো কত আইন রয়েছে যা কাজীর গরুর কেতাবে থাকার মতো। যে সব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। আইন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কোনো ধারণা নেই। আবার কিছুটা ধারণা থাকলেও সরকারি পদক্ষেপের অভাবে কেউ আইন মেনে চলে না।

এ ব্যাপারে বরিশালের আপন সংগীত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাবুল হাওলাদার আজিজ বলেন, আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও বরিশালের স্কুল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর সামনে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান। প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। আবার আইন মানার প্রবণতা কারও মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।

প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করে তৈরি আইনটি বছরে পর বছর পেরিয়ে গেছে। দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু আইন করেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। ফলে প্রকাশ্যে ফ্রি স্টাইলে চলে ধূমপান।

প্রকাশ্যে ধূমপান কেউ আর অপরাধ মনে করে না। আইনে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও তা কৌশলে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে ধূমপান চলে বেশি। এছাড়া অন্যান্য স্থানেও ধূমপানের প্রবণতা কমবেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বাসের মধ্যে স্বয়ং চালককে গাড়ি চালানো অবস্থায় ধূমপান করতে দেখা যায় প্রতিনিয়তই। সরকার ২০০৫ সালে প্রকাশ্যে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যে সবস্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয় সেসব স্থানের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-আধাসরকারি অফিস, লিফট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ভবন, বাস টার্মিনাল, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক এবং সরকারি গ্যাজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষিত যে কোনো স্থান।

আইনে পাবলিক পরিবহনে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে পাবলিক পরিবহন বলতে গাড়ি, বাস, জাহাজ, লঞ্চসহ যান্ত্রিক সব ধরনের যানবাহন এবং সরকার ঘোষিত কোনো যানবাহনকে বোঝাবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাবলিক পরিবহনের মধ্যে বাস, লঞ্চ ও জাহাজে ধূমপানের প্রবণতা বেশি। বাসের যাত্রীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কম হলেও চালক ও হেলপারা চলন্ত গাড়িতেই ধূমপান করে থাকে। তবে প্রকাশ্যে ধূমপানের প্রবণতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তুলনামূলক বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাই বেশি ধূমপান করে থাকে।

বরিশাল নগরীর লঞ্চ ঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রকাশ্যেই চলে ধূমপান। এসব স্থানে ভ্রাম্যমাণ যেসব দোকানপাট রয়েছে সেগুলো মূলত সিগারেট কেন্দ্রিক। সিগারেট বিক্রেতা ফেরি করে সিগারেট বিক্রি করে।

লঞ্চের মাস্টার, কর্মচারীরা বেশি পরিমাণে ধূমপান করে থাকে। পাশাপাশি লঞ্চের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরাও প্রকাশ্যে ধূমপান করে থাকে।

এ ব্যাপারে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার দেওয়ান আলম রায়হান বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের বড় কারণ হলো ধূমপান। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে আশপাশের মানুষেরও ক্ষতি হয়।

আমরা মাদকের বিরোধী শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়াম্যান সামসুদ্দোহা প্রিন্স বলেন, প্রকাশ্যে ও পাবলিক প্লেসে ধূমপান করার ব্যাপারে জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা দরকার। পাবলিক প্লেসে ধূমপানের কারণে অনেকের ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এতটুকু দাবি করা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না যে, পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তাহলে মানুষের ভোগান্তি একটু হলেও কমবে। তবে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য ৫০ টাকা জরিমানার বিধান সংশোধন করে নতুন আইনে ৫০০ টাকা করা হয়। কিন্তু‘ ধূমপানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনেরই অভিযান চলছে না বরিশালে।

নিউজ এডিটরস কাউন্সিল বরিশাল’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে বরিশালে স্কুল-কলেজের দিকে তাকালেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে সিগারেটের খায়। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেও তা না দেখার ভান করি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যলয়ের অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, প্রথমে দু-একটি সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও ক্রমেই সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তরুণরা হালকা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন। পরে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে শুরু হয় ‘হার্ড কোর ড্রাগ’ সেবন। সে সময় একজন মাদকসেবী ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি সেবন করতে শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রকাশে ধূমপান বন্ধের জন্য আমরা চলতি বছরে আমরা বেশ কয়েকটি সেমিনার করছি। খুব শিগগিরই প্রকাশে ধূমপানের বিরুদ্ধে আমরাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড