সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের খাদ্যদ্রবাদি মাড়াইয়ের অন্যতম মাধ্যম ঢেঁকি। বর্তমানে মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঢেঁকির ব্যবহার এখন নেই বললেও চলে।
তবে এখনও দেশের কিছু কিছু গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকির দেখা মেলে। এসব ঢেঁকিগুলোরও আবার ব্যবহার কমে এসেছে। আগে বারো মাস ব্যবহার করা হলেও এখন ঢেঁকি শুধুমাত্র কিছু কিছু বিশেষ সময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে শীতের সময় পৌষ পার্বনে ঢেঁকির ব্যবহার অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।
একসময় ভোরে আজানের সাথে সাথে স্তব্ধতা ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত ঢেঁকির শব্দ। পরিবারের নারীরা সে সময় দৈনন্দিন ধান, গম ও যব ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। পাশাপাশি চিড়া তৈরির মতো কঠিন কাজও ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে শবে বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব, পৌষ পার্বণসহ বিশেষ বিশেষ দিনে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করা হতো।
সে সময় গ্রামের বধূদের ধান ভানার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারদিকে হৈচৈ পড়ে যেত। তাছাড়া ওই সময় এলাকার বড় কৃষকরা আশপাশের দরিদ্র নারীদের টাকা বা ধান দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা ভাঙিয়ে নিতেন। অনেক দরিদ্র পরিবার আবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। ঢেঁকিতে ভাঙা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু চালের বেশ কদর ছিল।
ধান-গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে এক সময়ের নিত্য প্রয়োজনীয় ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়। সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রাপথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের গৃহবধূ তাছলিমা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই ঢেঁকি দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যদ্রবাদি মাড়াই করেছি। আগে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করতে আসত। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ আসে না। এখন সবাই মেশিনে চাল মাড়াই করে।
তিনি আরও বলেন, আগে মাত্র ৫-৬ টাকা কেজি দরে চাল থেকে আটা তৈরি করেছি। তাতে আমাদের সংসার চালানোর জন্য বেশ ভালো উপার্জন হতো। এখন ১০ টাকা কেজি দরে চাল মাড়াই করি কিন্তু কাজ কম থাকায় আয়ও কমে গেছে। আগে বারো মাস ঢেঁকিতে বিভিন্ন কাজ হতো। এখন শুধু শীতকালে চালের আটা তৈরির কাজ হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড