স্বীকৃতি নেই ৭১-এর যোদ্ধার, জীবন আর চলে না; 'প্রধানমন্ত্রী, একটু দেখবেন?'

জয়পুরহাট থেকে ফিরে :

যুদ্ধ শেষ, কেটে গেছে ৪৭ বছর। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ এখন অনেকটাই সচ্ছল। ৭১-এ যারা বাঙালির পক্ষ হয়ে লড়াই করেছিলেন, তারা পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনও সে স্বীকৃতি পাননি। এমনই একজন জয়পুরহাটের খনজনপুরের প্রয়াত অমর সরকার ওরফে বুড়ো দা।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের হটাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে এই বুড়ো দা তৈরি করেছিলেন দুটো কামান। কামান দুটোর একটি জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে বলে জানান বুড়ো দা'র স্ত্রী সবিতা সরকার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের এই সৈনিক স্বীকৃতি না পেয়েই ক্যানসারাক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২৩ মে ইহলোক ত্যাগ করেন। এখন তার রেখে যাওয়া সংসার কীভাবে চলে সে খবর কেউ রাখে না। চোখের পানি ফেলে এমনই আক্ষেপ করছিলেন বুড়ো দা'র বুড়ো স্ত্রী সবিতা। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, দিন আর চলে না, প্রধানমন্ত্রী একটু দেখবেন?

কীভাবে সংসার চলে সবিতা শোনালেন সে গল্প। দুই সন্তানের পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে এ পর্যন্ত দিনানিপাত করে এসেছেন। যখন যে কাজ পেয়েছেন সবিতা সে কাজই করেছেন সংসারের ঘানি টানতে। কখনো বস্তা সেলাই করে, কখনো কাঁথা সেলাই করে যা আয় হয়েছে তাই দিয়ে কোনো রকমে দিন কেটেছে। এমন অনেক দিন পেরিয়েছে না খেয়েও দিন কেটেছে।

দুই সন্তানের একজন অসুস্থ। কোন কাজ করতে পারেন না। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনিসহ কোনোরকমে সংসার চলে বিধবা সবিতার। ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হয়েছে বুড়োদা'র স্ত্রী সবিতার দুঃখ গাঁথা। কিন্তু কোনো সাড়া আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে।

স্বীকৃতি পেতে অনেকের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কোনো ধরনের সহায়তা মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনেক কিছু করেছেন। তবু এ পর্যন্ত তার স্বামী কোনো স্বীকৃতি পাননি। তবে আশা ছাড়েননি সবিতা। যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বুড়ো দা একদিন দেশ বাঁচাতে কামান তৈরি করেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সোনার বাংলায় অন্তত না খেয়ে থাকতে হবে না অমরের পরিবারের। প্রধানমন্ত্রী হয়তো একদিন দেখবেন। চোখের পানির দাম হয়তো একদিন মিলবে। এই আশা বুকে নিয়েই বেঁচে আছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় কামানের স্রষ্টার বিধবা স্ত্রী সবিতা।