• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুড়িগ্রাম চরাঞ্চলবাসীর মাঝে নেই ভোটের আগ্রহ

  মমিনুল ইসলাম বাবু

২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৬
নির্বাচন
ছবি : প্রতীকী

সংসদ কিংবা ইউনিয় কোনো ভোটের বিষয়ে তেমন আগ্রহ থাকে না কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলবাসীর মাঝে। নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের অবহেলা, অর্থনৈতিক সংকট আর পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকাকেই দায়ী করছেন পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অবহেলিত মানুষজন।

দেশের সর্বশেষ উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। এই জেলার তিন দিকেই প্রায় ৩ কি.মি. ভারতীয় সীমানা কাঁটায় বেষ্টিত। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম নদ-নদীময় জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ, দুধকমুার, ধরলা, তিস্তা নদীসহ ১৬টি নদ-নদীর ৩১৬ কি.মি. দীর্ঘ নদী পথে। এখানে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় চরাঞ্চল। এর মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে ৩ শতাধিক চরে মানুষের বসবাস। জেলায় ৯টি উপজেলা, ৭৩টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয়েছে ৪টি আসন।

এখানে প্রায় ৬০/৬৫টি ইউনিয়ন নদীর সাথে সম্পৃক্ত। অনেক ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে চলে গেছে। জেলার প্রায় ২১ লাখ মানুষের মধ্যে ভোটার ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ২ জন। এর মধ্যে নারী ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৭ জন এবং পুরুষ ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৪৫ জন। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। অধিকাংশ চরাঞ্চলবাসীকে সারা বছরই নদী ভাঙনের স্বীকার হতে হয়। কৃষি নির্ভর জেলাতে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় বছরের বেশির ভাগ সময় বেকার থাকতে হয়। মৌসুম ভিত্তিক কাজ থাকলেও বছরের ৫/৬ মাস কাজ থাকে না দারিদ্র পীড়িত এই জনপদের মানুষের হাতে।

কাজের দিক দিয়ে বেশি অবহেলিত নারী শ্রমিকরা। অবহেলিত চরাঞ্চলবাসী নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারে না। ফলে রাজধানী, বগুড়া, চট্রগ্রাম, ফেনী, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ উন্নত শহরগুলোতে ছোটেন কাজের সন্ধানে। অনেকেই গার্মেন্টসগুলোতে চাকরি করেন। আবার অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুবাদে থেকে যান কর্মস্থলে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মঙ্গা শব্দটি না থাকলেও এখনও এই জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ পিছিয়ে জেলাবাসী।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে কুড়িগ্রাম-১ আসনে ভোটার ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ১০৪জন। ভোটার উপস্থিতি ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫৬ জনে ভোটার উপস্থিতি ৪৬ শমিক ৫৯ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ভোটার ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮০৬ জন। ভোটার উপস্থিতি ৪৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ভোটার ২ লাখ ৫০ হাজার ৩ জনের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০০১সালে ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪২ জন। ভোটার উপস্থিতি থাকেন ৭৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ । ২০০৮ সালে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ।

কুড়িগ্রাম-২ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১ লাখ ১৯হাজার ৮১২ জন। উপস্থিতি ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৫ জন। উপস্থিতি ৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৩ জন। উপস্থিতি ৫১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৪৩ জনের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০০১ সালে ভোটার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৮ জন। উপস্থিতি ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০০৮ সালে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৩৯২ জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৮ দশমিক ০২ শতাংশ।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৮৬৫ জন। উপস্থিতি ৪৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৫২৮ জন। উপস্থিতি ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ১ লাখ ৯৯ হাজার ১০৪ জন। উপস্থিতি ৪৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৬৬ জনের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৬২ দশমিক ৯০শতাংশ। ২০০১সালে ভোটার ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০১ জন। উপস্থিতি থাকেন ৭১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০০৮ সালে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৩ জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৯ জন। ভোটার উপস্থিতি ৪৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ৪৬০ জন। উপস্থিতি ৪৩ দশমিক ৩১শতাংশ। ১৯৯১ সালে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৩ জন। ভোটার উপস্থিতি ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭৬ জনের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৬ দশমিক ১৮শতাংশ। ২০০১ সালে ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন। উপস্থিতি থাকেন ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০০৮ সালে ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৪ জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা মজিবর (৩৫) আফজাল (২৮), লাইলী বেগম (৪২), রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ার চরের বাসিন্দা হাসেম (৬০), গার্মেন্টস কর্মী শিউলি আক্তার (২৫) জানান, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে চরবাসীর তেমন কোনো মূল্যায়ন থাকে না। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে আর দেখা মেলে না। তাই কর্মস্থল থেকে টাকা-পয়সা খরচ করে এসে ভোট দেবার ইচ্ছে জাগে না।

অপরদিকে, ঢাকায় বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহিদুর রহমান (৩৫) বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ছুটি পাওয়া যায়, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মামুনুর রহমান (৩৬) জানান, কুড়িগ্রামের সঙ্গে বাস কিংবা রেল যোগাযোগ তেমন উন্নত নয়। কুড়িগ্রাম-ঢাকা যাওয়া আসা একদিন চলে যায়। অর্থ খরচটিও বেশি পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানে ছুটি পেলেও সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ভোট দিতে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে আমরা যারা বাইরে কর্মের জন্য থাকি। আমাদের মতো যারা ভোটার বাহিরে থাকি তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করলে আমরাও ভোট প্রদান করে আমাদের মতামত দিতে পারব।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, নদী বেষ্টিত যাত্রাপুর ইউনিয়নে অনেক পরিবারই আছে তাদের কেউ না কেউ জেলার বাইরে গিয়ে কাজ করে। তারাই অনেকেই ইউনিয়ন বা সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসে না। তাদের কাছে ভোট না সংসার চালানোটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে অনেকেই ভোট দেওয়া থেকে অনুপস্থিত থাকেন।

এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, ভোটার অনুপস্থিতিটা বেশি লক্ষ্য করা যায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকায় অনুপস্থিতির প্রভাব তেমনটা পড়ে না। এছাড়াও ভোটারদের কর্মস্থলে অবস্থান করা, অসচেতনতা এবং মৃত ব্যক্তির নাম সময় মতো ভোটার তালিকা থেকে কর্তন না হওয়াকেও ভোটার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড