চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা ২ আসনে এবারে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাজী আলী আজগর টগর ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিজিএমই এর সহসভাপতি ও রাইজিং ফ্যাশন লি. এমডি এবং বিলুপ্ত জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান খান বাবুর সাথেই এবারের নির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
এমনটাই মনে করছে এলাকার সাধারণ ভোটাররা। বিএনপির প্রার্থী বাবু খান ক্ষমতার বাইরে থেকেও এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক মূলক কাজ করে বেশ জনপ্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। এম.পি হলে নানারকম উন্নয়নের আশ্বাসও দিচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী আলী আজগর টগরও বিগত দিনে তার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা ভোটারদের কাছে বলে ভোট চাইছেন। তবে ভোটের মাঠে দুই জনই হেভিওয়েট প্রার্থী।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন ১৪ সালের নির্বাচনে অনেকটা আ. লীগের প্রার্থী আলী আজগর টগর ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও এবারের নির্বচনে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন তিনি। অতীতে চুয়াডাঙ্গার এই আসনটি বিএনপি জামায়াতের আধিপত্য থাকলেও এখন আর সেই অবস্থান নেই বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজী আলী আজগর টগর এলাকায় যেমন জনপ্রিয় তেমনি তার বিরুদ্ধে নানা রকম দুনীতির অভিযোগও রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকায় তার আপন ভাইয়ের নাম চলে আশায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। জনশ্রুতি আছে গ্রুপিং রাজনীতির কারণে তিনি নিজ এলাকায় তৈরি করেছেন টগর লীগ। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মঞ্জুকে সমর্থন না করে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী সেখ সামসুল আবেদীন খোকনের হয়ে কাজ করে জয়ী করান।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি আলী আজগর টগর বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সম্পন্ন মিথ্যা। আওয়ামী লীগের সময় ২ আসনে যে উন্নয়ন আমি করেছি তাতে এবারের নির্বাচনে ভোটাররা আমাকেই আবারও নির্বাচিত করবে।
মূলত নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এসব কিছুকেই কাজে লাগাতে চান বিএনপির মাঠ কর্মীরা। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গা ২ আসনটি তারা উদ্ধার করতে পারবে। এই বিষয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান বাবু খান বলেন, ভোটরা যদি নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তবে চুয়াডাঙ্গা বিএনপি ঘাটি হিসেবে পরিচিত ২ আসনটি আবারও বিএনপি জয়লাভ করবে। এছাড়া দল ক্ষমতায় গেলে এবং নিজে নির্বাচিত হলে এই আসনে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করাও পরিকল্পনা আছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
মাঠ পর্যায়ে সাধারণ ভোটাররা বলছে ভোটের সময় আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনের পর নেতারা বাইরে চলে যায়। এলাকায় এখন অনেক নেতা দেখা মিললেও বড় বড় এসব নেতাকে আর কদিন পরে দেখাই যাবে না। তবে সবকিছু দেখে বুঝেই যোগ্য প্রার্থীকেই এবার ভোট দিবে ভোটররা। এমনটাই মনে করে সাধারণ ভোটাররা।
এক নজরে চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের অতীতের নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এ আসনে বিএনপি ৪ বার, আওয়ামী লীগ ৩ বার, জাসদ ১ বার ও জামায়াত ইসলামী ১ বার নির্বাচিত হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী আলী আজগার টগর ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী শেখ সিরাজুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৩০ ভোট। ২০০৮ সালেও মহাজোট প্রার্থী হাজী আলী আজগর টগর ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হাবিবুর রহমান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ ভোট। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মোজাম্মেল হক ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর্জা সুলতান রাজা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৫০ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপির হাজী মোজাম্মেল হক ৬৫ হাজার ৭৫৫ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মীর্জা সুলতান রাজা পেয়েছিলেন ৬৩ হাজার ৭৩২ ভোট। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগের নির্বাচনে জনতা মুক্তি পার্টির প্রার্থী মীর্জা সুলতান রাজা বিজয়ী হয়েছিলেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড