ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও জেলার কোঁচল ও চাঁপাসার এবং ভারতের নাড়গাঁও ও মাকারহাট সীমান্তে শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) বসেছিল দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। ক্ষণিকের জন্য হলেও দীর্ঘদিন পর দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হন, বিদায়ের সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দেশের সাধারণ লোকজন যাঁরা অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তাঁরা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন।
স্বজনদের সাথে দেখা করতে আসা সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম (৫০) জানান, এবার দেখা করেছেন তার ছোট বোন সেফালীর সঙ্গে। ১৬ বছর আগে সেফালীর বিয়ে হয় ভারতের মাল্দা জেলার চানমুনী গ্রামে। বিয়ের পর এই প্রথম বোন ও বোনের স্বামীর দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে তার বোন ও বোনের ছেলে-মেয়ে ও স্বামীকে কাপড় এবং মিষ্টি দিয়ে বেশ আনন্দ ভোগ করেন।
দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার প্রতীমা রাণী (৬০) জানান, ২০ বছর পুর্বে আমার ছোট মেয়ে কমলারাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সাথে। কিন্তু আজ মেয়ের সাথে তাঁরকাটার এপার-ওপারে দাড়িয়ে কথা বলে এবং কাটাতাঁরের ফাঁক দিয়ে মিষ্টি ও কাপড়-চোপড় দিতে পেড়ে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি।
পাথরকালী মেলার সভাপতি নগেন চন্দ্র পাল বলেন, কয়েক যুগ ধরে গোবিন্দপুর গ্রামে কালীপূজার আয়োজন করছেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। আর কালীপূজার পরের শুক্রবার ওই এলাকায় বসে মেলা। পাথরে নির্মিত মূর্তির নাম অনুসারে মেলার নামকরণ হয় পাথরকালীর মেলা। তবে এ বছর খেতে পাকা ধান থাকায় মেলার তারিখ পিছিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। মেলা ঘিরে প্রতিবছর এক দিনের জন্য সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষেরা কাঁটাতারের বেড়ার দুই ধারে দাঁড়িয়ে সহজেই দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা সেরে ফিরে যান।
সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়, ভারতে বসবাসকারী আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে সকাল ৯টা থেকে মেলায় ভিড় জমিয়েছেন বাংলাদেশের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। তাঁরা মেলায় ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র কিনছেন। অবশেষে বেলা সোয়া তিনটা থেকে দেড় ঘণ্টায় তাঁরা স্বজনদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। বিনিময় করেন কাপড় ও খাদ্য। বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রজনীকান্ত বর্মণ (৫১) বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট ও ভিসা করার সামর্থ্য নাই। তাই ওপারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এইদিনে সীমান্তে আসি। স্বজনের মুখটা দেখে অনেক সময় মন চায় জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া সেই সুযোগ দেয় না।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড