• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কমলার ভালো ফলন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

  পান্না দত্ত, মৌলভীবাজার

১৩ নভেম্বর ২০১৮, ২১:০০
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে কমলার ভালো ফলন হয়েছে তবুও হাসি নেই কমলাচাষিদের মুখে

এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মৌলভীবাজারে কমলার ভালো ফলন হয়েছে। তবুও হাসি নেই কমলাচাষিদের মুখে। বানরের আক্রমণ ও অতি বৃষ্টির কারণে কাঁচা কমলা ঝরে পড়ায় কিছুটা হতাশ তারা। আর মৌসুমের শুরুতেই ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় বাধ্য হয়ে কাঁচা কমলা বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন কমলা বাগান ঘুরে জানা যায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ২০০১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ হয়। এবার ১৪২ হেক্টর জায়গায় কমলা চাষ করা হয়েছে। সাড়ে চারশোর অধিক চাষি এই কমলা চাষের সঙ্গে জড়িত।

মৌলভীবাজারসহ সিলেট অঞ্চলের কমলা সুমিষ্ট হওয়ায় দেশজুড়ে এর সুনাম আছে বেশ। এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও হয়েছে ভালো। শীত ও কুয়াশা শুরু হলে কমলা মিষ্টি বেশি হয় এবং পাকতে শুরু করে। কিন্তু মৌসুম শুরুর আগেই বানরের আক্রমণ ও অতি বৃষ্টির কারণে কমলা ঝরে পড়ায় নিরুপায় চাষিরা। তাই বিপাকে পড়ে কম দামে কাঁচাপাকা কমলা বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। আর ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে দেশীয় কমলা বাজার হারাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা আমদানি বন্ধ করার দাবি চাষিদের।

লালছড়া বাগানের কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া বলেন, এবার কমলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে বানরের আক্রমণে আমরা অতিষ্ট। রাতে বানর এসে ফল নষ্ট করে চলে যায়। এছাড়া বছরের মাঝামাঝিতে অতিরিক্ত বৃষ্ঠি হওয়ায় অনেক ফল ঝরে পড়ে যাচ্ছে।

আরেক কমলা চাষি আছিয়া বেগম জানান, প্রথমে কমলার ফলন ভালো হলেও আমরা সব ফল সংগ্রহ করতে পারছি না। এছাড়া নভেম্বরের শেষ দিকে ফলটা পাকা শুরু করে। কিন্তু আগাম ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে প্রকৃত দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি। পরে ভালো দাম না পেতে পারেন এমন আশঙ্কায় অনেকে আধাপাকা কমলা কমদামে বিক্রি করছেন। কমলা চাষের উন্নয়নে আগাম আমদানি বন্ধ করলে ভালো হবে।

কৃষক রফিক আহমদ জানান, কমলা প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ভালো সুবিধা পেয়েছি। আবার এই প্রকল্প চালু করলে এই এলাকায় কমলা চাষের প্রসারের সাথে চাষিরাও আরও উৎসাহিত হবে।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় সবচেয়ে বেশি কমলা চাষ হয় জুড়ী উপজেলার লুফাছড়া, লালছড়া, শুকনাছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুলসহ পাহাড়ি এলাকায়। শুধু এই উপজেলায় ৯১ হেক্টর জায়গায় কামলা চাষ হয়েছে এবার। কমলা বাগানগুলোতে রোগ বালাইসহ নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করেছে কৃষি বিভাগ।

জুড়ী উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম খান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কমলা চাষিদের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কমলা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষ করে বছরে দুইবার জৈবসার ব্যবহার ও রোগ বালাই নিরাময়ে নিয়মিত পরিচর্চা করা।

ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে দেশি কমলা বাজার হারাচ্ছে, তা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার উপপরিচালক মো. শাহজাহান জানান, কমলা গাছকে পোকা মাকরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করায় গত বছরের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে ভারত থেকে কমলা আমদানি করায় প্রকৃত দাম পাওয়া থেকে চাষিরা বঞ্চিত হতে পারেন। এছাড়া মৌলভীবাজারে এক সময় কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প চালু ছিল। এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বন্ধ আছে। এ প্রকল্পের কারণে কৃষি বিভাগের নিয়মিত সুবিধার পাশাপাশি সরকারি বাড়তি সুবিধা পেতেন কমলা চাষিরা। দেশি কমলা চাষ উন্নয়নে আবারও কমলা প্রকল্প চালুর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার আশ্বাস দেন তিনি।

দেশি কমলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প চালুসহ মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা আসা বন্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি স্থানীয় কমলা চাষিদের।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড