পাবনা ৪: আ.লীগে দম্ভ, বিএনপিতে দ্বন্দ্ব

ঘোষিত হয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল। সারাদেশ এখন সরগরম নির্বাচনী আলোচনায়। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের অংশ গ্রহণের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করলেও আ.লীগ এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছে মনোনয়ন ফরম। কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন? নানা আলোচনায় জল্পনা কল্পনায় এখন মুখর নির্বাচনী আসনগুলো। নানা সমীকরণ হিসেব নিকেষের এই আলোচনা চলছে পাবনায় ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা ৪ আসনেও।

ঈশ্বরদী জংশন, ইপিজেডের পাশাপাশি নির্মানাধীন দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে আসনটির গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মাঠে রয়েছেন আ.লীগের হাই প্রোফাইল মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্তঃকোন্দলে বারবার এ আসনটি আ.লীগের দখলে গেছে দাবি করে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে আসনটি ফিরে পেতে চান বিএনপি নেতারাকর্মীরাও।

পাবনা ৪ আসনের বর্তমান সাংসদ ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। প্রবীণ এ নেতা আ.লীগের মনোনয়নে চার বার বিজয়ী হলেও বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন। পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি সন্ত্রাস ও দলের ত্যাগী নেতৃত্বকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ ওঠায় এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মনোনয়ন। দলীয় কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতৃত্বকে মূল্যায়ণ না করায় দূরত্ব বেড়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও।

এ প্রসঙ্গে আটঘড়িয়া উপজেলা আ.মীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, নৌকার প্রশ্নে আমাদের কোন অস্বস্তি নেই। তবে দীর্ঘদিন এক নের্তৃত্ব থাকায়, এবং ক্ষমতার দম্ভে দলীয় নেতাকর্মীদের অবহেলা। অবমূল্যায়ণ এবং হয়রানির কারণে কর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই মনোনয়ন দেবেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে আটঘড়িয়া আসনে যে বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে তাতে এ এলাকার মানুষ বার বার আমাকে নির্বাচিত করেছে। আগামীতে সে অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখতে জনগণ নৌকাতেই আস্থা রাখবে।

এ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা আ.মীলীগ নেতা পাঞ্জাব বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী রবিউল আলম বুদু এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) নজরুল ইসলাম রবি। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন তারা।

এদিকে ১৯৯১ সালে আসনটিতে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সরদার নির্বাচিত হন, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সিরাজ সরদার বিএনপির মনোনয়ন পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। ২০০৮ সালেও হাবিব বিরোধীতা করেন বিএনপি প্রার্থীর। বিএনপির দলীয় কোন্দলে প্রতিবারেই সহজ জয় পায় আ.লীগ। তবে এ পরিস্থিতির উত্তরণ চান বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা। দলের ত্যাগী নেতাদের মতামত গুরুত্ব পেলে আসনটিতে কোন্দল কাটিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি নেতারাও।

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেন, আটঘড়িয়া বিএনপির ঘাঁটি। কিছু বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকের কারণে আমরা বার বার আসনটি হারিয়েছি। এ এলাকায় জাতীয়তাবাদী শক্তির মানুষ ঐক্যবদ্ধ। বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে, ঐক্যবদ্ধ ভাবে মানুষ ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে।