মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আ.লীগের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার-৪ আসন। প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকের কদর বেশি এ আসনে। চা বাগান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ এ আসনের সিংহভাগ ভোটারদের মাঝে নৌকার জয়-জয়কার । তাই নির্বাচনে জয়লাভের চেয়ে নৌকা প্রতীক পাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে। একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিগত নির্বাচন গুলোতে বিএনপি এ আসনটি দখল নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। প্রার্থী বদল করেও সুবিধা করতে পারেনি অতীতে। তারপর হাল ছাড়তে রাজি নন বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মূলত এ আসনে প্রধান দুই দলের মধ্যে লড়াই হবে।
আসনটিতে ভোটারদের দিক দিয়ে আ.লীগ এগিয়ে থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে দলটিতে। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ আসনে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ আবারও মনোনয়ন চান। এছাড়া কেন্দ্রীয় আ.লীগ সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রণধীর কুমার দেব, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগ সদস্য আব্দুর রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক দলীয় মনোনয়ন পাবার আশায় নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। করছেন গণসংযোগ ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচার প্রচারণা। অপরদিকে জেলা পর্যায়ে কোন্দলের কারণে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দুর্বল রয়েছে। কোন্দলের প্রভাব মনোনয়নে পড়বে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের টিকেট চাইবেন তেমন দুই জন প্রার্থীর নাম দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জালাল উদ্দিন।
কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা আর শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার- ৪ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮শত। এর মধ্যে বড় একটি অংশ চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভোটার।
স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে আ.লীগ ৮ বার, বিএনপি ১ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার জয় পেয়েছে। এর মধ্যে আ.লীগ থেকে প্রয়াত মো. ইলিয়াছ ২ বার, প্রয়াত আলতাফুর রহমান ১ বার আর উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ৫ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ৮৮ সালে ৩ মার্চ জাতীয় পার্টি প্রার্থী এবং ৯৬ সালে বিএনপি প্রার্থী জয় পায়।
আ.লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। তিনি জেলা আ.লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় দলের তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এ নেতার। আগামী নির্বাচনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় সবার আগে আছেন তিনি। দুই উপজেলায় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরসহ নানা কর্মকাণ্ড করছেন। পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আব্দুস শহীদ। করছেন প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। এছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে সক্রিয় থেকে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কেন্দ্রীয় আ.লীগ সদস্য মো. রফিকুর রহমান। শ্রীমঙ্গল উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া রণধীর কুমার দেব মনোনয়ন চাইতে পারেন। চা বাগান সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘু নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। গত নির্বাচনেও দলের মনোননয়ন চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমর্থন এ নেতার প্রতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা।
সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, দলীয় প্রধান বিগত ৫ বার একাধারে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দলের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্যায়ন করেছেন তিনি। যদিও কালো টাকার অনেক থাবা আমার ওপর দিয়ে গিয়েছে তারপরও আমার এলাকার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করতে দ্বিধাবোধ করেননি।
এ ব্যাপারে আ.লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. রফিকুর রহমান বলেন, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আরও গতিশীল নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। এবং আন্তরিকতার সহিত কাজ করা প্রয়োজন। সেই দিক বিবেচনা করে আমি মৌলভীবাজার-৪ আসনে আলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রণধীন কুমার দেব দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে বলেন, আমি এই এলাকার মানুষের পাশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। জনগণের সাথে আমার অন্তরের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তারা আমাকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে নেত্রী যদি মনোনয়ন দেন তবে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নেত্রী আগামী নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব বেছে নিবেন।
এ দিকে বিএনপি এই আসনে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থানে আছে। জেলা বিএনপির কোন্দলের প্রভাব রয়েছে এ আসনের দুই উপজেলায়। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পৃথক পৃথক অনুসারী রয়েছেন এখানে। দলের মনোনয়ন পেতে দুই পক্ষের অনুসারীরাই প্রচারণা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান । তবে একাধিক মামলার কারণে এলাকায় গণসংযোগসহ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন তার সমর্থকরা। মনোনয়নের দৌড়ে মুজিবুর রহমান এগিয়ে থাকলেও দলের কর্মীদের সাথে কম সম্পর্কের অভিযোগ এনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ব্যানার-পোস্টার টাঙানোর মধ্যে দিয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জালাল উদ্দিন।
নির্বাচন ব্যাপারে মুজিবুর রহমান বলেন, গত এগারো বছর ধরে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগসহ এলাকার দরিদ্র মানুষের সাথে কাজ করছি। আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা, হামলা নির্যাতন হয়েছে। তারপরও আমি মাঠ ছাড়ি নাই। আমাকে এলাকায় যাইতে দেয়া হয় না। তারপরও আমার সাথে তৃণমূলের যোগাযোগ আছে। এলাকার মানুষের সাথে আমি সম্পৃক্ত আছি। আমি আশাবাদী বিএনপি আমাকে নমিনেশন দিবে।
বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জালাল উদ্দিন জীপু বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শে ছাত্রজীবন থেকে কাজ করছি। এ আসনে গ্রাম, শহর, বাগান সব এলাকার মানুষের কাছে ছাত্র রাজনীতি থেকে আমি পরিচিত। আমি আশা করছি দল আমাকে নমিনেশন দেবে।
তবে এই আসনে অতীতের মতো এবারও প্রতিককেই বেশি গুরুত্ব দিবেন ভোটাররা এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড