• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছাত্রনেতা থেকে জননেতা হয়ে ওঠার প্রয়াস

  বিশেষ প্রতিবেদক

২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৬
জননেতা

সারাদেশেই তাপপ্রবাহ চলছে। ঈদের ছুটির এই তীব্র গরমে মানুষের নাভিশ্বাস চরমে। আমাদের গ্রামের বাড়ির অদূরেই ছোট খেলার মাঠ। তার ওপারে ছোট জটলা। দূর থেকেই চোখে পড়লো মাঝের পাঞ্জাবি পড়া বছর তিরিশের এক যুবক। এক হাতে কপালের ঘাম মুছছে, অন্যহাত নেড়ে নেড়ে আশেপাশের মানুষদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। দূর থেকে হলেও মুখের হাসিটা স্পষ্টই। আগ্রহ বাড়ল। এগিয়ে গেলাম। জটলার মাঝে আমিও মিশে গেলাম।

"সরকার বলছে উন্নয়ন, আমিও বলি উন্নয়ন। তারপরেও আমাদের এলাকায় কোথাও কেমন একটা 'কিন্তু' থেকে যায়। জনপ্রতিনিধি না বানিয়ে আমরা ভোট দিয়ে মাঝে মাঝে মধ্যস্বত্ত্বভোগী নির্বাচিত করি। সরকার আর আপনাদের মাঝে কানেকশন (যোগাযোগ) না করিয়ে বরং তারা দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। এতেই যে সুবিধা! আপনাদের প্রাপ্তি সহজে মেরে দেওয়া যায়।"- মুখে মৃদু হাসি নিয়ে অনর্গল বলে চলছে মিষ্টভাষী এই ছেলে। দীর্ঘপথ পেড়িয়ে এসেছে, শরীরের ক্লান্তির ছাপ থাকলেও চোখ-মুখ দিয়ে তা বুঝতে দিচ্ছেন না। লোকজনও তার কথা শুনছে। জটলা ক্রমশ বড় হচ্ছে।

ততক্ষণে আমি তাকে চিনে নিয়েছি। আগে দু-একবার দেখাও হয়েছে। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম। এর আগেও এলাকায় লোকমুখে শুনেছি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আমি শুনে কিঞ্চিৎ বিরক্তও হয়েছিলাম। ক্ষমতা এবং অর্থলোভ হয়তো তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। বয়স রাজনীতিতে একটা বড় 'ফ্যাক্টর' হিসেবে কাজ করে। পরিপক্কতা খুবই দরকার। কিন্তু আচমকা এ জটলা আর মাঝের কণ্ঠস্বর আমাকে ভ্রান্তি থেকে বের করে নিচ্ছে।

রাজিদুল বলছে, "আমি ভোট চাইতে আসিনি। আমি আপনাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেওয়ার কথা বলতে এসেছি। সরকার যা দিচ্ছে, সেটা আপনার প্রাপ্তি। জনপ্রতিনিধি যেই হোক, তার থেকে সেটা বুঝে নেওয়া শিখতে হবে। আপনাদের সচেতন হতে হবে। আপনি ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে পারেন মানে আপনিও সরকারের অংশ। কোনো দূরত্ব নয়, কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী তৈরী করা যাবে না।"

তার শব্দচয়ন এবং বক্তব্যের মাধুর্যতা বলে দিচ্ছে আমাদের দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের চেয়ে তিনিও কম যান না। নানা কিছিমের মানুষ, নানা ধরণের প্রশ্নও করছে তাকে। খেই হারাতে দেখলাম না। ভীড়ের মাঝে আমাকে দেখেই হাত ইশারা করলো। আমিও তাকে অভিবাদন জানালাম।

তার কথায়, "আমার বয়স ৩০ পেরোয়নি। আমি জানি, এ জন্য অনেকে তাচ্ছিল্য করতে পারেন। আমার এই বয়সটাইতো দুঃসাহস করার বয়স। জয়-পরাজয়ের হিসাব আমি কষিনি। হারলেও আমি আপনাদের সন্তান, জিতলেও আমি আপনাদের সন্তান। আমি এই দৌলতপুরের মাটির সন্তান। আমি যেদিন প্রথম বাচামরা-বাঘুটিয়ার চরে যাই, সেদিন ভেবেছিলাম এই এলাকার আদর্শ জনপ্রতিনিধি হতে হলে তরুণ বয়সেই হতে হবে। এই দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দৌড়াতে মনের পাশাপাশি শারীরিক শক্তিরও দরকার। আমি মানুষের কাছে যেতে চাই, মানুষের কাছে থাকতে চাই।"

খানিকটা গলা জড়িয়ে আসছে বুঝা যাচ্ছিলো। সামনে থেকে পানি চেয়ে খেয়ে নিলো। আবার বলা শুরু করে, "আমি বারবার এখানে ফিরে আসবো, আপনাদের কাছেই আসবো। আমাকে ভোট দিবেন কি না, সেটা আপনাদের বিবেচ্য। কিন্তু ভালোবাসাটা আমি চাই, আমি এটা আদায় করে নেবো। আপনাদের ভালোবাসাটা আমার শক্তি।"

কারো সাথে করমর্দন, কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরে জটলা থেকে প্রস্থান করলো এক জননেতা। মুগ্ধ জনতা ঘোর কাটিয়ে ক্রমশ ছত্রভঙ্গ হচ্ছে। কেউ কেউ তাকে নিয়ে প্রশংসাসূচক বাক্য বিনিময়ও করছে।

পরদিন আমার পূর্ব পরিচিত স্থানীয় এক সাংবাদিকের সাথে দেখা। বাজারে চা খেতে খেতে ইচ্ছে করেই নির্বাচন প্রসঙ্গ টানলাম। অতপর আগের দিনের ঘটনা বলছি। তার কথায়, রাজেদুল জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে অনেক মানুষের কাছে পরিচিত। আর এই এলাকায় তার একটা বিশেষ 'ক্লিন ইমেজ' আছে। তার চাচাও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও স্বনামধন্য আইনজীবী। এ কারণে তার পরিবারেরও গ্রহণযোগ্যতা আছে। এই বয়সেই কিছু মানুষের কাছে শিক্ষানুরাগী হিসেবেও পজিটিভ ইমেজ তৈরী করেছে। ঠিকমতো প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারলে এবং সুষ্ঠু ভোট হলে ওর প্রত্যাশিত ফল আসতে পারে। তার নিজে তরুণ হওয়াতে তরুণদের ভালো বুঝে সে। এই ইয়ং গ্রুপ ওকে ব্যাপক সাপোর্ট দিচ্ছে। তারা একটা পরিবর্তন আশা করছে।

ওই সাংবাদিকও তরুণ এ রাজনীতিবিদের বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে বলেন, আমাদের দৌলতপুর সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা প্রত্যেকেই ওর সাথে একমত হবে। পশ্চিমে শেষ প্রান্তে বড় নদী, দুর্গম চর এলাকা। মাঝের দিকটা নিন্মভূমি, বর্ষা এলে নৌকা ছাড়া যাতায়াত করতে পারবেন না। আবার পূর্ব প্রান্তের কিছু এলাকা স্বাভাবিক আছে। যদি আসলেই আপনি চান জনপ্রতিনিধি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে, তাহলে তরুণ বয়সেই আপনাকে জনপ্রতিনিধি হতে হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড