• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অভাবে টাকা নেই চিকিৎসার, ছেলের মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন দরিদ্র বাবা

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও :

২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪৬
ছেলের মৃত্যু

অভাবের কারণে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেনি হত দরিদ্র বাবা। উপায় না পেয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে মৃত্যুর অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন হত দরিদ্র বাবা। অপেক্ষার শেষ হয় প্রায় ২৪ ঘন্টা পর মারা যায় কিশোর সুমন। চোখের সামনে ছেলে মরতে দেখেন অসহায় বাবা।

শনিবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের জুগিহার কাশিবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে আসে স্বজনরা।

মৃত সুমন (১৬) ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের জুগিহার বাশবাড়ী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ৩ মাস পুর্বে কাজের সন্ধ্যানে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় গিয়েছিলেন কিশোর সুমন সহ সীমান্তবর্তী ওই এলাকার কয়েকজন ২৫-৩০ কিশোর। সেখানে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে চিওড়া সরকারি কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ লেবার হিসেবে কাজ করছিলেন তারা।

"রমজানের শেষ দিকে ঈদের জন্য বাড়ীতে চলে আসেন সবাই। যাতায়াতের খরচ বাচাতে বাড়ীতে আসেননি কিশোর সুমন ও তার প্রতিবেশী জিলানী। সেখানে ঈদের পরদিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হন সুমন। মারধরের পর সুমনকে উদ্ধার করে ভর্তি করা চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কৌশলে এ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খোকন মিয়া। সুমন কে রংপুরে নিয়ে আসেন প্রতিবেশী জিলানী।

রংপুরে ৫ দিন চিকিৎসার পর সুমনের স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বিশেষায়িত একটি ক্লিনিকে রেফার্ড করে দেয় হাপসাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বজনরা টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা না করে গতকাল শুক্রবার নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসেন সুমনকে। শনিবার সকাল ১১টায় মারা যায় সুমন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় বাড়ীতে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত সুমনের মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তার স্বজনরা।

সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিউতে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছিলে চিকিৎসক। প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে, এত টাকা কোথা থেকে পাবো। এজন্য গতকাল ছেলেকে বাড়ীতে নিয়ে এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম। এ্যাম্বুলেন্সে ছেলে বাড়ীতে নিয়ে আসার টাকা গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

সুমনের বাবা আরও জানান, ঠিাকাদার খোকন তাকে চিকিৎসা বাবদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপরে আর খোঁজ নেননি তিনি। আজ সকালে মৃত্যুর খবর জানালে দাফনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সুমনের সাথে কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একসাথে কাজ করছিলাম আমরা। ঈদে সবাই বাড়ীতে ফিরলেও জিলানী ও সুমন ছিলই। পরে শুনলাম মারামারি হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সুমনকে। কেন, কি কারণে মারামারি হলো কেউ পরিস্কার বলতে পারেনি। তবে সুমনের মৃত্যুর পর থেকে জিলানীও গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানায় তারা।

সুমনের প্রতিবেশী শরিফ ও তার স্বজনরা জানায়, ২৫ হাজার টাকা প্রতিদিন খরচ করতে হবে, এটা শোনার পর তাকে নিয়ে তার বাবা বাড়ীতে চলে এসেছে। এছাড়া কোন উপায় ছিলো না। আজ রাতে খাওয়ার জন্য যে চাল, ডাল লাগবে সেটার জন্য আমরা গ্রামবাসীর নিকট সহযোগিতা তুলতেছি। অভাবে পড়ে সুমনের মৃত্যুর প্রহর গুনতে বাধ্য হয়েছে পরিবারটি।

পরিবারের কাছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নম্বর নিয়ে খোকনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক আকতারুজ্জামান মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ওই ভবনের কাজ পেয়েছেন ফারুক আহমেদ মিয়াজী নামে এক ঠিকাদার। খোকন নামে কোন ব্যক্তির অধিনে লেবারের কাজ করতে পারেন,তবে তিনি ঠিকাদার নয়।

তার কাছ থেকে নেওয়া ঠিকাদার ফারুক আহমেদ মিয়াজীর নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিঠু জানান, সবচেয়ে অসহায় পরিবার সুমনদের। কোনমতে খেয়ে পড়ে বেচে আছে। চিকিৎসার জন্য টাকা নেই বলেই ছেলেকে নিয়ে এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলো।

আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আকালু (ডংগা) বলেন, ঘটনাটি মর্মাত্মিক। ছেলেটি চিকিৎসা করানো সামর্থ নেই তার বাবার। তাই বাধ্য হয়েছে এমন কাজ করতে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হবে।

জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা আমাদের কেউ অবগত করেনি। তবে পরিবারে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ আইনী সহায়তা প্রদান করবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড