নেহাল আহম্মেদ প্রান্ত, আদমদীঘি (বগুড়া):
এবার ছাগলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফুলের গাছ খাওয়ার অপরাধে খোঁয়াড়ে দেওয়া হয়েছে ৪ টি ছাগল। থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য প্ল্যাটফর্ম থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ওই ৪টি ছাগল খোঁয়াড়ে দিয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মোক্তার হোসেনের নির্দেশে ছাগলগুলো খোঁয়াড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। আর পুলিশ ওই ৪টি ছাগল দিয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোয়াঁড় মালিক মো: পিন্টু।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার ১৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে চারটি ছাগল সান্তাহার জংশন স্টেশনের প্লাটফর্মে এসে ঘোরাঘুরি করছিল। এমন সময় স্টেশন এলাকা থেকে থানার ফুল গাছ খাওয়ার অপরাধে ওই ছাগলগুলোকে উপজেলার দমদমা গ্রামের পিন্টুর খোঁয়াড়ে দিয়ে আসে পুলিশ। আর ওসি মোক্তার হোসেনের নির্দেশে ছাগলগুলো খোঁয়াড়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ গত ১৫ ডিসেম্বর সেই ওসির টাকার বিনিময়ে ছাগল ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই তার নির্দেশ ছাড়া কোনো পুলিশ সদস্য নিজ দায়িত্বে এমন কাজ করতে পারবে না। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে তিনি আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন বলে মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা। আবার কেউ কেউ বলছেন ফুলের গাছ খাওয়ায় টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নিউজের পর থেকেই ওসি মোক্তার হোসেন ক্ষোভে ছিলেন। রাগের বশবর্তী হয়ে তার ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এই কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া নিজের অনিয়ম অপরাধ ঢাকতে তিনি লোক দেখানো এই কাজ করলেন বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।
খোঁয়ার মালিক মো: পিন্টু বলেন, গত মঙ্গলবার ( ১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ এসে ৪ টি ছাগল খোঁয়াড়ে দিয়ে যায়। পরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ শোধ করে মালিকেরা আমার খোঁয়াড় থেকে ছাগল নিয়ে গেছে।
খোঁয়াড় থেকে ছাগল নিয়ে আসা বিপ্লব বলেন, ছাগল দুটি লিটন নামের একজনের। পরে লিটন বিষয়টি আমাকে জানালে আমি খোঁয়াড় থেকে ১৪০ টাকা দিয়ে ওই ২টি ছাগল নিয়ে আসি।
স্টেশন কলোনির ছাগল মালিক লিটন বলেন, আমি শুনতে পাই আমার দুটি ছাগল স্টেশনে ফুলের গাছ খেয়েছিল। তাই ফুলের গাছ খাওয়ার অপরাধে প্ল্যাটফর্ম থেকে আমার ২ ছাগলকে খোঁয়াড়ে দিয়েছিল। পরে খোঁয়াড় থেকে ছাগল নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কারা ছাগল খোঁয়াড়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না।
এ ব্যাপারে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মোক্তার হোসেন মুঠোফোনে বিরক্তের সুরে বলেন, আমি এগুলো জানি না ভাই, কে ছাগল ধরেছিল, কি করেছিল এগুলো আমাকে বলেন না প্লিজ।
তিনি বলেন, ছাগল যদি কেউ ধরে থাকে, বিধি নিয়মে ধরেছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ছাগল খোঁয়াড়ে দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ যদি দিয়ে থাকে, তাহলে দিয়েছে, রাগান্বিত স্বরে বলে সংযোগটি কেটে দেন।
এর আগে গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সারা দিনব্যাপি সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদস্যদের দিয়ে প্রায় ১৪ টি ছাগল থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখে।জংশন স্টেশনটির এই থানা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য থানার পাশে খোলা জায়গায় কিছু ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ওসি মোক্তার হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি কিছু গাছ কিনে নিয়ে আসেন। আর সেই গাছগুলো ছাগলে খেয়ে ফেলে। আর তাতেই রেগে যান ওসি মোক্তার। এরপর তিনি একে একে সকল ছাগলগুলো ধরে নিয়ে আসেন পুলিশ সদস্যদের দিয়ে। আটক রাখা হয় থানা এলাকায় আলামতের ঘরে। ছাগল মালিকেরা তাদের ছাগলগুলো খোঁজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে জানতে পারেন ফুলের গাছ খাওয়ার অপরাধে রেলওয়ে থানায় আটক রাখা হয়েছে ছাগলগুলো।
পরে ছাগল মালিকরা ছাগল নিতে গেলে থানার ওসি বলেন রেলের ভিতরে ছাগল এসেছে কেন? ছাগলগুলো ফুলের গাছ খেয়েছে তাই দেওয়া হবে না। এরপর বিপাকে পড়েন ওই সকল দরিদ্র ছাগল মালিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলেও ছাগলপ্রতি ১০০ টাকা করে দিয়ে ছেড়ে নিয়ে যায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড