• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নওগাঁয় এতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত

  কাজী কামাল হোসেন, ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০
লাঠি খেলা

নওগাঁ হাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলার হারিয়ে যাওয়া এতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে শহরের এটিম মাঠে দুপুর ১২টায় এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। লাঠি খেলায় তিনটি দল অংশ নিয়ে তাদের শারীরিক কসরত প্রদর্শণ করে। যেখানে বিভিন্ন বয়সী মানুষ খেলা উপভোগ করে। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে শারীরিক কসরতের এই আয়োজন হয়ে উঠেছিল আনন্দময়। প্রাণবন্ত এই আয়োজন উপভোগ করেন হাজারো মানুষ। এর আগে সকাল ১০টায় এটিম মাঠে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) গাজিউর রহমান বেলুন ও ফেষ্টুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। শোভযাত্রায় একুশে পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি.এম আব্দুল বারী, সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্য ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে উৎসাহ দিচ্ছেন শতশত দর্শক। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে লাঠির এই কসরত দেখতে মানুষের ঢল নামে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। লাঠি খেলায় এলাকার ৩টি দল অংশগ্রহণ করে। এই লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজনের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছুটে আসেন নানা বয়সের মানুষ।

খেলা দেখতে আসা নাইস পারভীন বলেন, লাঠি খেলা গ্রাম বাংলার একটি প্রাচীন খেলা। এমন আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। নতুন প্রজন্মকে জানাতে পারছে আজকের এই দিনে নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয়েছিল। সেই হারিয়ে যাওয়া লাঠি খেলা সম্পর্কেও জানতে পারছে।

শহরের স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষার্থী লুবনা আক্তার বলেন, আব্বুর সাথে লাঠি খেলা দেখতে এসেছি। এর আগে সরাসরি কখনো এই খেলা দেখেনি। দারুন লাগছে খেলাটি।

একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি.এম আব্দুল বারী বলেন- ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু নওগাঁ দুইদিন পর হানাদার মুক্ত হয়েছে। পাকবাহিনীকে পরাজিত করে কিভাবে নওগাঁ স্বাধীন হয়েছে সেই বার্তা আগামী তরুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেই লক্ষে আমরা গত কয়েক বছর থেকে হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে আসছি। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। এ খেলার বিশেষ্যত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় লাঠিয়াল বাহিনী ও তীরন্দাজরা প্রতিরোধ করেছিল। এটিও একটি স্মৃতি চিহ্ন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থান বাহিনীরা ঢাকায় আত্মসমর্পন করার খবর শুনবার পরও নওগাঁর পাকিস্থান বাহিনীরা অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর এক শীতের সকালে মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্থানী সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধে পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিলনা। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারী গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্ত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতন কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড