সরিষা ফুলে শোভিত নওগাঁর মাঠ

সরিষা ফুলের হলুদ রংয়ে শোভিত নওগাঁর মাঠ। দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে সরিষার হলুদ মাঠ যেন কবির লেখা এক টুকরো হলুদ গাঁদার চিঠি। দিগন্তজোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে মৌমাছি আর প্রজাপতি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার ভালো ফলনের পাশাপাশি বর্তমান বাজারদর ঠিক থাকলে দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন নওগাঁর চাষীরা।

উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার নওগাঁয় উৎপাদিত ধানের দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা ছুটছেন লাভজনক তৈল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের দিকে। তাই চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড় ৫-৬মণ হারে সরিষার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর স্থানীয় বাজারগুলোতে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। আবার সরিষা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায় আর সরিষা তোলার পর বোরো ধান রোপন করা সম্ভব। যার কারণে প্রতি বছরই সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৬৮হাজার ৪শত ১১হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে যা গত বছর ছিল ৪৭হাজার ৮শত হেক্টর। আর তৈল জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩৪হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের সরিষা চাষীদের প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সার ও সরিষার বীজ প্রদান করা হয়েছে। ফলে জেলায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মান্দার পরানপুর গ্রামের সরিষা চাষী মাহবুবুর রহমান বলেন, সরিষা গাছের পুরোটাই কাজে লাগে। তাই সরিষার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। গতবছর আমরা প্রতিমণ সরিষার দাম পেয়েছি ২৮শত থেকে ৩হাজার টাকা। তাই এই বছরও দাম যদি একটু বেশি পাওয়া যায় তাহলে দেশের সকল সরিষা চাষীরা অনেক লাভবান হতে পারবেন। এখন পর্যন্ত জমিতে যে পরিমাণ সরিষার দানা এসেছে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দিলে চলতি মৌসুমেও ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। এই সরিষা চাষের লাভ দিয়ে আমরা ইরিবোরো ধান চাষ করি। আগামীতেও আরো জমিতে সরিষা চাষ করবো।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের সরিষা চাষ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। দেশে যেভাবে দিন দিন সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে বিদেশী ভোজ্য তেল আমদানী অনেকটাই কমবে।