• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

  সাগর মিয়া,হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:০২
লাঠি খেলা

কালের আবর্তনে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিলো এই খেলাটি। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় খেলোয়াড়দের দলনেতার উদ্যোগে গড়ে উঠত লাঠি খেলার দল। আর পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতো এই খেলা।

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হতো খেলার স্থান ও সময়। নিজেদের নিত্যদিনের কাজ দ্রুত সমাপ্ত করে ছুটে যেত খেলা দেখার জন্য পল্লির সরল মানুষরা। বাবা,বড় ভাই কিংবা নিকট আত্নীয়দের কাঁধে চড়ে এ খেলা দেখে চোখ জুড়াতো ছোট্ট শিশুরাও। বাড়ির আঙিনায় এই খেলা দেখার জন্য ঘরের চালে গাছের ডালে ভীড় জমাতো যুবকেরা আর বেড়ার ফাঁকে, জানালা খুলে খেলা দেখতো মা-বোনেরা। আর সে দিনের সেই কাঠের টুল আর পিড়ি পেতে বসে খেলা দেখত বৃদ্ধরা । দর্শকদের হাতে তালি আর মুখের জয়ধ্বনি খেলোয়াড়দের আনন্দ যোগাত।

ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচানাচি, প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা, প্রতিমূহূর্তে টান টান উত্তেজনা- গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার দৃশ্য এটি।

জেলার হোসেনপুর উপজেলায়ও একসময় জনপ্রিয় ছিল এই লাঠি খেলা। কিন্তু নতুন কোনো দল না হওয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এই খেলা। একই সঙ্গে হুমকির মুখে এই খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকা।

লাঠিখেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট। খেলার জন্য লাঠিটি প্রায় পাঁচ হাত লম্বা হয়। প্রতিটি লাঠিই থাকে প্রায় তৈলাক্ত। প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করেন।

হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের বেশ কয়েকজন লাঠিয়াল বলেন, পূর্বপুরুষরা এ খেলা খেলতেন। সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ খেলায় নিয়মিত অংশ নিয়েছিলাম। বিভিন্ন জেলায় বায়না করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতো।এখন এ খেলার প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ থাকলেও আয়োজকদের নাই তোড়জোড়।

লাঠিখেলার সাথে সম্পৃক্ত গোবিন্দপুরের মুসলিম জানান, এলাকায় লাঠিখেলা হলে সাথে ব্যান্ডপার্টি, যাদু শিল্পীরাও থাকতো,জীবন্ত কবরসহ আশ্চর্য রকম খেলা প্রদর্শন করতাম।কোথাও প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে কয়েকদিন আগে থেকে আত্মীয়স্বজনরা আসত। লাঠিখেলা দেখতে হাজার হাজার দর্শক সমবেত হতো। আনন্দ-উল্লাসে সময় পার হতো। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিশোর থেকে প্রবীণ পর্যন্ত কারও তেমন সময় নেই।

হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রৌশনারা রুনু জানান, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা এখন বলতে গেলে হারিয়েই যাচ্ছে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্য রক্ষায় অবশ্যই সবার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড