• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ট্রেন দুর্ঘটনায় হারিয়ে গিয়েছিল মাতৃহারা রবিউল, বাবাকে পেয়ে খুশি

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৩৮
ট্রেন দুর্ঘটনা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার তিনদিন গত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি আহত শিশু রবিউল তার বাবাকে কাছে পেয়ে আজ সে খুব খুশি । (২৬ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার সকালে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বাবা মিলন মিয়ার কাছে তুলে দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:বুলবুল আহমেদ । এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী দলের সদস্যসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা।

রবিউলের বাবা মিলন পেশায় বাবুর্চি। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী মাজার এলাকায়।

শিশু রবিউলের বাবা বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তিনি তার ছেলের সন্ধান পায়। পরে ভৈরবের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মোবাইলে ছেলের সাথে ভিডিও কথোপকথন হয়। এ সময় তিনি আরও বলেন, রবিউলের মা দুই বছর আগে মারা গেছেন। তার তিন ছেলে। রবিউল দ্বিতীয়। সোমবার সকালে আমার ছেলেকে গোসল করিয়ে দিলে ছেলে বলে বাবা আমি বাহিরে বন্ধুদের সাথে নিয়ে খেলা করি। কিন্তু খেলার এক ফাকে তারা ঢাকার বাহিরে কবে চলে গেল জানতেই পারিনি। ছেলের সন্ধানে অনেক জায়গায় খোঁজ করেছি। থানায় গেছি। ছেলে ট্রেনে কোথাও যেতে পারে, ধারণা ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার খবর জানা থাকলেও এই নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা কাজ করেনি। শেষে পুলিশের মাধ্যমে ছেলের সন্ধান পাই।

এছাড়া পরে ট্রেন দুর্ঘটনার তিনদিন গত হওয়ার পর গতকাল রাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরে রাতেই ভৈরবে চলে আসি। আজ সকালে উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাগন আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

রবিউলের ভাষ্যমতে, সোমবার ট্রেনে করে ঢাকা থেকে ভৈরবে আসে সে। উদ্দেশ্য সিলেটে যাবে ঘোরাঘুরিতে। পরে ভূল করে ভৈরব থেকে এগারসিন্ধুর ট্রেনের ছাদে ওঠে। ট্রেন দুর্ঘটনার সময় সে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। দুর্ঘটনার পর সে তার বন্ধুদের হারিয়ে ফেলে।

আজ সকালে রবিউলকে বাবার হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রিফফাত জাহান ও বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় শিশুটি চিৎকার দিয়ে উঠত। আমরা ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতাম। ওই মুহূর্তে শিশুটির পাশে পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন ছিল।

তিনি আরও জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার পর গত ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। তারপর নিয়মিত পরিচর্যায় গত দুই দিনে সে অনেকটা ভালো আছে। দুর্ঘটনার পর সে অজ্ঞান ছিল। পরে জ্ঞান ফিরে একটু সুস্থ হলে, সে জানিয়েছিল তার নাম রবিউল। কিন্তু ঠিকানা বলে ভিন্ন ভিন্ন। একবার বলে তার বাড়ি নরসিংদী, আরেকবার বলে ঢাকার গুলিস্তানে। তবে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালের দিকে সে জানায়, তার বাবার নাম সুমন আর তাদের বাড়ি বরিশাল। সে ট্রেনেই থাকে, এছাড়া তেমন কিছু বলতে পারছিল না।

রবিউলকে উদ্ধারের পর প্রথমে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শিশুটির ছবি দিয়ে তার অভিভাবকদেরকে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও রবিউলকে নিয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। পরে শিশুটির বাবাকে ফিরে পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালেন করেন একটি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল। তারা ফেসবুক আইডি থেকে রবিউলের ছবি পোস্ট করে। সেটা নজরে এলে রবিউলের বাবা মিলন মিয়া মিরপুর থানায় গিয়ে যোগাযোগ করেন। পরে মিলন মিয়ার সঙ্গে রবিউলের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা হয়।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত শিশুর স্বজনদের খোঁজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় খবর প্রকাশ হয়েছে। তাই শিশুটির বাবা দ্রুতই তার সন্ধান পেয়েছে। আজ তার বাবার কাছে আমরা শিশু রবিউলকে তুলে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্দুর গোধূলি ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ তিন বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। নিহত হন ১৮ জন। শতাধিক আহত হয়েছেন ।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড