• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রধানমন্ত্রীর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে হলুদ চাষ, অর্ধকোটি টাকা লাভের সম্ভবনা

  মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও:

০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫৫
হলুদ চাষ

দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন পরে না থাকে, টেলিভিশনে ও পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর এমন কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে লিজ নিয়ে অনাবাদি ২৫ বিঘা জমিতে মসলা জাতীয় ফসল হলুদ চাষ করেছেন রবিউল ইসলাম রবি।

তার এমন উদ্যোগ কৃষিকে সম্প্রসারিত ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন তার কৃষি খামারে ৫০-৬০ জন মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এমন উদ্যোক্তার হাত ধরে আগামীদিনে কৃষি আরও উন্নত হবে বলে মনে করছেন কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

২৫ বিঘার এই হলুদ থেকে এবার অর্ধকোটি টাকা লাভের আশা করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের যুবক রবিউল ইসলাম রবি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনাবাদি ফসলি জমিতে হলুদ গাছের সমারোহে আশেপাশের প্রকৃতি সবুজে ভরে উঠেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে পাতা গুলো। আর হলুদ ক্ষেতে পরিচর্যায় কাজ করছেন ২৫-৩০ জন নারী পুরুষ। কেউ বা আবার অন্যান্য ফসল বাদাম, কপি, মূলা ক্ষেতের পরিচর্যায় দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় ২৫ জন নারী পুরুষ শ্রমিক। তাছাড়া পুকুরে মাছ চাষে কাজ করছেন ৪ জন পুরুষ।

কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবি ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত । তিনি ব্যবসার পাশাপাশি গত বছর অনাবাদি দেড় বিঘা জমিতে বগুড়া পাটনাই জাতের হলুদ চাষ করেছিলেন। এতে তার এক বিঘা জমিতে হলুদের ফলন হয়েছিল ১৬০ মণ। তাতে এবার তিনি ৩৫ বিঘা জমি লিজ নেন। তার মধ্যে শুধু ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করছেন হলুদ। চলতি বছরের বৈশাখ মাসে এসব জমিতে রোপন করেন হলুদ। মাত্র সাড়ে চার মাসে হলুদের গাছপালা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ গ্রোথ ও চেহাড়া ভালো হওয়ায় এবার তিনি বিঘায় প্রায় ২০০ মণ ফলনের আশা করছেন। এছাড়াও তিনি বাকি জমি গুলোতে বাদাম, আদা, ফুলকপি, মূলা, আখঁ ছাড়াও পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। তার এমন কার্মকান্ড স্থানীয় উদ্যোক্তা ও চাষীদের মাঝে বেশ সারা জাগিয়েছে।

কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবির কৃষি চাষাবাদ দেখে এখন স্থানীয় কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতে মসলা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

তার এমন উদ্যোগের ফলে আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার। এতে শ্রমিকরা কাজ করে আয়ও করছেন ভালো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালকের তথ্য মতে, এ জেলার মাটি উর্বর ও উঁচু এবং মাঝারি উঁচু হওয়ায় সবজি ও ফলের চাষ অনেক ভালো হয়। প্রতিবছর এখানে প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আদা, হলুদ ২৫০, ফুলকপি ১ হাজার ৫০০, মূলা ৯০০ ও বাদাম ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এছাড়াও অন্যান্য ফসলও অধিক হাড়ে চাষ হয় ও ফলন ভালো হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবির খামারে কাজ করা স্থানীয় শ্রমিক আহসান হাবীব, রাজা, স্মৃতি রাণী সেন সহ অন্যান্যরা বলেন, রবিউল ভাইয়ের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে ও পুকুরে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন মানুষ কাজ করছি। এতে তার উছিলায় আমরা আয় করে সংসার চালাতে পারছি।

কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও তার বাসভবনে কৃষি খামার বিভিন্ন পত্রিকায় ও টেলিভিশনে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যবসার পাশাপাশি এমন চাষাবাদ শুরু করেন।

তিনি বলেন, কৃষির মতো ব্যবসায়েও এতোটা লাভবান হওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই আমি এবার ৩৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করি। এর মধ্যে অনাবাদি ২৫ বিঘা জমিতে হলুদ ও এক বিঘা জমিতে আদা চাষ করেছি। আর বাকি জমিতে বাদাম, কপি, মূলা আখ চাষ করেছি। হলুদ চাষে ২৫ বিঘাতে সব মিলিয়ে আমার প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ হবে। আমার কৃষকরা যদি ফসলের ন্যায্য মূল্য পাই তাহলে খরচ বাদ দিয়ে শুধু এই মৌসুমে হলুদ থেকে অর্ধকোটি টাকা এবং অন্যান্য ফসল ও পুকুরের মাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা মোট ১ কোটি টাকা লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যেমন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠে কাজ করে অনেক মানুষ কর্ম করে খাচ্ছেন তেমনি স্মার্ট কৃষি গড়ার লক্ষে সঠিকভাবে পরামর্শ ও সরকার যদি আমার মতো উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করেন তাহলে আগামীতে আরও বৃহতভাবে কৃষিতে অগ্রসর হতে পারবো। এতে অনেক আরও অনেক মানুষের আয়ের উৎস বাড়বে ও দেশে মসলা এবং সবজি জাতীয় ফসলের চাহিদা পুরন করার পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাসের কথা জানিয়ে কৃষি অধিদফতরের উপ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রবিউল ইসলাম কৃষিবান্ধব হয়ে শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। এই উদ্যোক্তা বুঝতে পেরেছে যে কৃষি একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই তিনি কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার তাকে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা যাচ্ছি। আশা করি তিনি কৃষিতে অনেক লাভবান হতে পারেন ও রবিউল ইসলামের মতো কৃষি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে আগমীতে কৃষি আরও উন্নত হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড