• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নরসিংদীর হোগলা পাতার কারুশিল্প বদলে দিয়েছে হাজারো কর্মহীন মানুষের জীবন 

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৫
কারুশিল্প

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের জুহুরিয়া কান্দা গ্রামের হোগলা পাতার নজর কাড়া কারুশিল্প বদলে দিয়েছে হাজারো কর্মহীন নারী-পুরুষের জীবন।বেলাব থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের হোগলা পাতার কারুশিল্প তৈরীর কারখানা।

জুহুরিয়া কান্দা গ্রামের প্রায় প্রতি পরিবারেই কেউ না কেউ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত। ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই পাতার রয়েছে নানা ধরনের নাম। বাংলায় হোগল, হোগলা পাতা ও ধারী পাতা। ইংরেজিতে ক্যাট টেইল বা বিড়ালের লেজ। রোদে শুকানো এ সকল পাতা বিশেষ কায়দায় পেঁচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। দড়ি পাকানোর কাজে পুরুষের চেয়ে মহিলারা অনেকটা এগিয়ে ।

উপকূলীয় অঞ্চলে থেকে সরবরাহকৃত হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে হরেকরকম কারুপণ্য তৈরি হয়। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ কারুশিল্পের কাজ করার সুযোগ থাকায় জোহরিয়া কান্দা গ্রামের অধিকাংশ নারী ঐতিহ্যবাহী একুটির শিল্পের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তারা আজ স্বাবলম্বী। হোগলা পাতার আড়াআড়ি ও পরিনের দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পছন্দের কারুপণ্যের রুপ দেওয়া হয়।

এখানকার অধিকাংশ মহল্লা ও কারখানায় দলবেঁধে চলে কারুপণ্য তৈরির কাজ। মাথা, চোখ ও হাত একসাথে খাটিয়ে শৈল্পিক বিন্যাসের মাধ্যমে শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন অসাধারণ শৈল্পিক প্রতিভা।

এখানকার অধিকাংশ কারখানায় পেশাদার কারুশিল্পীদের দ্বারা মানসম্মত ও আধুনিক নকশায় হোগলা পাতার ঝুড়ি, ফুলের টব, লড্রি বাস্কেট, কিচেন বাস্কেট , ওয়ালমেট, ডাইনিং ও ফ্লোরমেট থেকে শুরু করে পাপসসহ নানা ধরনের কারুশিল্প তৈরি করা হয়।

মাপ ও সাইজ ঠিক রাখার জন্য অধিকাংশ কারুপণ্য বানাতে লোহা ও জিআই তারের ডাইস ব্যাবহার করা হয়।প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি এসকল কারুশিল্প পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। এখানের তৈরি কারুপণ্য বায়ারদের হাত হয়ে আমেরিকা, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া সহ প্রায় ৩২ টি দেশে রপ্তানি হয়।

হোগলা পাতা খুব সহজেই পচনশীল হওয়ায় এতে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। বিশ্বজুড়ে আজ পরিবেশ দূষনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সি-গ্রাস বা সমুদ্রের তীরের ঘাস অর্থাৎ হোগলা পাতা, তালপাতা, খেজুর পাতা ও গোলপাতা জাতীয় জিনিসের তৈরি পন্য। পরিবেশবান্ধব পন্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় হোগলা পন্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়ভাবে সরকারী প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে এ শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এলাকাবাসী।

তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা মাঈনুদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত। গাজীপুরের ন্যাচারাল ক্রাফট এর অর্ডার অনুযায়ী আমার এখানে বিভিন্ন ধরনের কারুশিল্প তৈরি হয়। তার কারখানায় বর্তমানে ২থেকে আড়াই শত শ্রমিক কাজ বলে ও জানান তিনি।

সুনিল চাকমা বলেন, আমি প্রায় ৭ বছর ধরে হোগলা পাতার কারুপণ্য তৈরির কাজ করছি। ওভারটাইম সহ মাসে আমি ১৭/১৮ হাজার টাকা আয় করতে পারি। এ দিয়ে আমার সংসার ভালোই চলছে।

বিন্নাবাইদ ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না বলেন, আমার এলাকার কয়েক সহস্রাধিক নারী-পুরুষ হোগলা পাতা কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তারা আজ স্বাবলম্বী। এ লাকায় কুটির শিল্প ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বিসিক শিল্পনগরী নরসিংদীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলি। সেইসাথে বিনা জামানতে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। তাছাড়া ও তারা যেন পরিবারের বোঝা না হয় সে জন্য বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ৫ থেকে ১০ লক টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড