• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উপজেলার নির্বাচন অফিসে টাকা দিলে তবেই মেলে সেবা!

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪
উপজেলার নির্বাচন অফিসে টাকা দিলে তবেই মেলে সেবা!

নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার নির্বাচন অফিস। যার নাম শুনলেই ভয়ে চোখ কপালে উঠে যায় ভুক্তভোগীদের। নতুন ভোটার, সংশোধন কিংবা স্থানান্তর যে কাজই হোক না কেন টাকা দিলে তবেই মিলবে প্রয়োজনীয় সেবা। শুধু এটাই নয়, টাকা ছাড়া সেবা নিতে গেলে সাধারণ মানুষ লাঞ্ছিত হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন অফিসে কর্মরত কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়তই লেনদেন চালায় দালাল চক্রের সদস্যরা। তাদের সাথে লেনদেন না করে গেলে সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

সম্প্রতি তাদের এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনো নীরব পন্থায় চলছে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কার্যক্রম।

এ দিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের সমাধান করতে দেরি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট ও চাকরিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

কিছু সংখ্যক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. ইসমাঈল হোসেন অনিয়মের কাজটিতে বেশ পারদর্শী। তার কাছে কোনো ভুক্তভোগী কাজ নিয়ে গেলে সেটি তিনি প্রথমে পরিষদের বাহিরে থাকা বেশকিছু কম্পিউটারের দোকানে ট্রান্সফার করে দেন। তাদের মাধ্যমে লেনদেন শেষে কাজ আসে নির্বাচন অফিসে।

তখন খুব দ্রুতই কাজটি সমাধান হয়ে যায়। তার বিনিময়ে ভুক্তভোগীকে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। এতেই শেষ নয় এমন মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পরও সরকারি এ কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা প্রার্থীদের পেতে হয় চরম দুর্ব্যবহার। শুধু এই নয় কর্মকর্তার রুমে ঢুকতে গেলেও লাগে এই ইসমাঈলের অনুমতি। ইসমাঈলের অনুমতি পেলেই ঢুকতে পারা যাবে কর্মকর্তার কক্ষে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আসা অহিদ মিয়া নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন ও নতুন ভোটার হওয়া নিয়ে এখানে চরম পর্যায়ে দুর্নীতি চলছে। কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেও হতে হচ্ছে ব্যাপক হয়রানী। এ জটিলতার সুযোগকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল এক দালাল চক্রের। যারা টাকা দিচ্ছে, তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছে না, তাদের সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না।

উপজেলাটির যোশর ইউনিয়ন থেকে আসা ইদ্রিস আলী নামে আরও একজন বলেন, আমার আইডি কার্ড করার জন্য নির্বাচন অফিসের ইসমাইল হোসেন ১৫০০ টাকা চেয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে এখনো আমার এনআইডির কাজ স্থগিত রয়েছে।

জুয়েল মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ভাইয়ের নতুন আইডি কার্ডের জন্য ২৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা ছাড়া তাদের কাছে সাইড পাওয়াই যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, অফিস স্টাফদের কি বলবো, তারা কি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে কিছু করে? সকলে মিলেই জনগণকে এক প্রকার জিম্মি করেই দিনের পর দিন এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিবপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার উপর আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, এগুলা আপনারা একটু যাচাই করে দেখেন। এগুলা আমাদের অফিসের অন্য সকল স্টাফ এ কাজগুলো করে। আমি এসব করি না।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার আশপাশের কিছু দোকানের বিভিন্ন ভাবে কন্টাক্টের মাধ্যমে তারা আপনাকে কাজ দেয় প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো কন্টাক্ট করি না। আপনারা যাচাই করেন। পরবর্তীকালে তিনি অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত করে কল কেটে দেন।

এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফারিজা নূরের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি রিসেন্টলি অফিসে জয়েন্ট করেছি। এখনো পর্যন্ত এসব কিছু আমি শুনিনি, তারপরও আপনি যখন বলেছেন বিষয়টির দিকে আমি নজর রাখবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড