শুভংকর পোদ্দার, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ):
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশি প্রজাতির পাখি শিকার করছে একটি অসাধু চক্র। সেই চক্রটি পাখিগুলো শিকার করে তা বিক্রয় করছে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চরাঞ্চলে খাবারের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় দেশি প্রজাতির পাখিগুলো উড়ে এসে বসে। সেই নির্দিষ্ট জায়গায় দেশিয় ফাঁদ পেতে তাতে খাবার দিয়ে রাখে অসাধু এই চক্র। ফাঁদের প্রধান উপকরণে রয়েছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। কারেন্ট জালে খাবার ছিটিয়ে দেয়ার পর খাবারের লোভে পাখি আসে। তখন পা আটকা পড়ে বক,শালিক,ঘুঘুসহ দেশি প্রজাতির বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পরে সেই পাখিগুলো বিক্রয় হয় মানিকগঞ্জের পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের শেষ মাথায় নর্থ চ্যানেলের কাছে এসব পাখি বেশি শিকার হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
দেশি প্রজাতির পাখিগুলো ফরিদপুরের বিভিন্ন হোটেল,রেস্তোরায় এসব পাখি রান্না করে কোয়েল পাখি বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছারাও হরিরামপুরে বারসিক,পালক (পাখি লালন করি) কর্মীদদের বিভিন্ন সাইনবোর্ড,ব্যানার,সচেতনতামুলক প্রচারেও থামানো যাচ্ছে না এসব দেশি প্রজাতির পাখি শিকারীদের।
আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা গ্রামের মাসুম খান জানান, জালালদি গ্রামে খালের পাশ থেকে গত বছরে আমরা বেশ কিছু পাখি শিকারীকে আটক করেছিলাম। এই বছর পাখির দেখাই মিলছে না। বর্ষার শুরুতে চারিদিকে যখন পানি উঠে, তখন কিছু উচু জায়গা শুকনো থাকে, আর সেখানেই পাখিগুলো খাবারের খোঁজে আসে। শুনেছি ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব করে। তবে এখানে এই বছর কোন শিকারীকে আর পাখি শিকার করতে দেবো না বলেও জানান তিনি।
পাখি শিকার করা এবং বিক্রি করার সময় প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের নটাখোলা গ্রামের বাসিন্দা জানান, আমি ফরিদপুর থেকে রবিবার সন্ধায় বাড়িতে যাচ্ছিলাম, খেয়াঘাটে প্রায় শতাধিক ঘুঘু পাখি জালে আটক করে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে। অপরিচিত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করি, কারা এই পাখিগুলো ধরেছে? এগুলো কোথা থেকে শিকার করেছেন? তারা জানিয়েছে, নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ফাকেরহাটের পাশে বাড়ি মেরেস খা এই দলের প্রধান।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জের শেষ মাথায় নর্থ চ্যানেলের কাছ থেকে কারেন্ট জালে খাবার ছিটিয়ে দেয়ার পর পাখিগুলো খেতে আসলে আটকা পড়ে। দু তিনদিন পর পর এই লোকগুলো চরে এসে নিরীহ পাখিগুলো শিকার করে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। আমরা এখান দিয়ে চলাচল করি, কিছু বললে বা নিষেধ করলে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না।
আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, স্থানীয় বেশ কিছু উঠতি বয়সের যুবকসহ অনেকেই শখের বশে আবার শুনেছি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ফরিদপুর থেকে আসা কিছু অসাধু লোক জাল, ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে। আমরা কিছু বলতে পারিনা, কারণ তারা পরিচিত আর তাদের দলে অনেক লোকজন।
এ ব্যাপারে মেরেস খা / পাখি শিকারে জড়িত কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে মানিকগঞ্জ জেলা পালকের (পাখি লালন করি) সদস্য সচিব বিমল রায় জানান, পাখি শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া জরুরি। চরাঞ্চলে পাখি শিকার করা হয়, এই অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে রবিবার সন্ধ্যায় হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সুমন কুমার আদিত্য জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই, প্রথম আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড