মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফে পল্লান পাড়া, লেংগুর বিল ও লম্বরি এলাকায় অভিযান চালিয়ে টেকনাফ কেন্দ্রিক অপহরণ ও মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুলসহ ছয়জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কক্সবাজার র্যাব- ১৫ এর অতি. পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।
তিনি জানান, কক্সবাজার টেকনাফের একটি অপহরণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিরীহ লোকদেরকে টেকনাফে নিয়ে এসে জিম্মি করে। পরবর্তীকালে মায়ানমারের বিভিন্ন নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। গত (২৩ জুলাই) র্যাব-১৫ কক্সবাজার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, (২০ জুলাই) তৌহিদ নামে এক স্থানীয় যুবক ঈদগাঁও থানাধীন পোকখালি গ্রামের হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে।
তার দাবি, এরপর মায়ানমারের সিমে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে মোট তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় (২৩ জুলাই) একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীকালে তৌহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের অভিযানিক দল মূল চক্রকে আটকের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গত (০৭ আগস্ট) র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস অভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট সাইদুল আমিন এবং আব্বাসকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আব্বাসকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে প্রেক্ষিতে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী এই চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুল ইসলামসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের হেফাজত হতে তিনটি স্মার্ট ফোন, তিনটি বাটন মোবাইল ফোন, ১৩টি সিম কার্ড এবং নগদ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ধৃত অপহরণকারীরা হলেন- মুহিত কামাল পিতা- মৃত সিরাজুল ইসলাম, নতুন পল্লানপাড়া টেকনাফ, সাইফুল ইসলাম, পিতা- হাফেজুর রহমান, লম্বরী টেকনাফ, মো. আব্বাস মিয়া প্র. জাহাঙ্গীর, পিতা- মৃত নুরুল হক, দাড়িয়ারদীঘি রামু, সৈয়দুল আমিন, পিতা- আব্দুল আলম, থৈয়ংগা কাটা রামু, তাহের হোসেন, পিতা- আব্দুস সালাম, কুতুপালং ব্লক-বি/২৭ উখিয়া, বর্তমানে- নতুন পল্লানপাড়া এবং হাবিবুল্লাহ প্র. লালু পিতা-কাদির হোসেন, সাং- নতুন পল্লানপাড়া, থানা- টেকনাফ বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভুক্তভোগীদের কাজ দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে তারা প্রথমে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত গুদামঘরে বন্দি করে রাখে। ভুক্তভোগীদের সংখ্যা ২০-২৫ জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিন এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে মায়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মায়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মায়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভুক্তভোগীকে মাছ ধরার বোটে করে আবার টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল গ্রামের প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে নানাভাবে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা গ্রামের লোকদেরকে প্রত্যেক মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে। মূলহোতারা গ্রামের প্রবেশ মুখে ২৪ ঘণ্টা চেকার নিয়োগ করে রাখে। প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোনো সদস্যকে দেখলে চেকাররা সাথে সাথে এ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপে জানিয়ে দেয়, ফলে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং প্রয়োজনবোধে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পাঁচটি, উখিয়া থানায় একটি এবং ঈদগাঁও থানায় একটি মোট সাতটি মামলা রয়েছে। উদ্ধারকৃত আলামতসহ ধৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড