মামলা থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগী নারীর আর্তনাদ

মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী অন্তরা সেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, আপনাদের কাছে রাঙামাটি ডিবি পুলিশ হতে যে তথ্য দিয়েছেন সে তথ্য অনুযায়ী আপনারা নিউজ করেছেন। স্ব-স্ব প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা নিউজ পরিবেশন করা হয়েছে। পূর্বের ঘটনার জেরে ২২ পিস ইয়াবা দিয়ে ডিবি পুলিশ আমাকে (অন্তরা সেন) অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।

ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, গত ২৭ জুলাই ২০২৩ বিকাল আনুমানিক ৪টায় শহরের পৌরসভা বৃক্ষমেলা সংলগ্ন এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ কনস্টেবল মো. আশিক আমাকে ডাক দিয়ে বলে অন্তরা আপা এখান থেকে একটা মহিলা বের হতে দেখছেন। আমি বলি না তো। তখন কনস্টেবল আশিক আমাকে বলে আপা আপনার সাথে একটু কথা আছে এ দিকে আসেন। তখন আমি তার সাথে একটু পেছনের দিকে যাই। তখন কনস্টেবল আশিক আমাকে তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে আশিক আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগী অন্তরা বলেছেন, এরপর আমাকে বলে চল ডিবি অফিসে যেতে হবে আমি (অন্তরা সেন) বলি কেন ডিবি অফিসে যাব। তখন আশিক বলে না গেলে কিভাবে নিয়ে যেতে হয় তা আমি জানি। কনস্টেবল আশিকসহ অন্যান্য ডিবি সদস্যরা জোরপূর্বক আমাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ আমার হ্যান্ডব্যাগ কেড়ে নেয়। তার পর আমাকে এক পাশে নিয়ে বলে আমরা যা বলি তাই তোমাকে বলতে হবে। যদি না বল তাহলে পাঁচশ পিস ইয়াবা দিয়ে তোমাকে চালান দেব সেটা আমাদের উপরের নির্দেশ। আমি একজন নারী ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে সবাই আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। তখন আশিকসহ ডিবি কার্যালয়ে থাকা লোকজন একটি কাগজে কিছু কথা লিখে নিয়ে আসে। ওই কাগজে তারা আমার নাম ঠিকানাসহ ২২ পিছ ইয়াবা আমার কাছে পাওয়া গেছে মর্মে জোরপূর্বক সে কাগজ আমাকে দিয়ে পড়ায় এবং কনস্টেবল আশিক আমাকেসহ দু’পাশে দুইজন মহিলা ডিবি পুলিশ দাঁড় করিয়ে ভিডিয়ো ধারণ করে। আমি তাদের ভয়ভীতি ও চাপের মুখে নিরুপায় হয়ে ওই কাগজের দিকে তাকিয়ে পড়তে থাকি। আমাকে যখন তারা ভিডিও করে তখন তারা ২২ পিস ইয়াবা ভিডিয়োতে দেখায়নি। শুধু আমার ভয়েসসহ আমাকে রেকর্ডিং করেছে ডিবি।

অন্তরা আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ডিবি পুলিশ আমাকে জোর করে ভিডিয়ো তুলে সে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছড়িয়ে দিয়েছে যা আমার মান-সম্মান ও চরিত্র হননের মতো কাজ করেছে ডিবি পুলিশ। ২৭ জুলাই রাতে আমাকে ডিবি পুলিশ কোতোয়ালী থানায় বুঝিয়ে দেয়। পরে মিথ্যা তথ্যাবলি দিয়ে কোতোয়ালী থানা (জজ মিয়ার নাটক সাজিয়ে) আমাকে ২৮ জুলাই ২০২৩ বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে আদালতে প্রেরণ করে।

তার দাবি, ওই দিনই আদালত আমাকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দেয়। গত ৩০ জুলাই ওই মামলায় আমি জামিনে বের হয়ে আসি। আমার এসব কথাবার্তা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নহে। তবে আমার মত আর যেন কেউ এভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হয় সে জন্য আমার এই বক্তব্য। আমি অনুরোধ করবো আপনাদের কলমের মাধ্যমে প্রশাসন এই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাকে মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করবেন। আমি ডিবি পুলিশ কনস্টেবল আশিকের বিচার চাই। তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দেব।

ডিবির এসআই ও অন্তরা সেনের মামলার আইও হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা কাগজে কলমে যা পেয়েছি তা মামলার এজাহারে দেখিয়েছি।

একই ভাবে যার বিরুদ্ধে অন্তরার অভিযোগ কনস্টেবল মো. আশিক বলেন, অন্তরা সেন যা বলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা অনেক লোকের সামনে তাকে ইয়াবা নিয়ে ধরা হয়েছে। আমরা কাগজে কলমে যা পেয়েছি তা দিয়ে তাকে আটকের পর চালান দেওয়া হয়েছে।