• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ

  মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

০২ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৩৬
সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ
স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোগো (ফাইল ছবি)

দীর্ঘ ১৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত ৯টি ওয়ার্ডে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। যদিও বহুদিন পর কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির অধিকাংশ ভাইটাল পোস্ট রাখা হয়েছে বিতর্কিত ও দলের বাহিরের বহিরাগত লোকদের। আবার এমনও হয়েছে একই ব্যক্তি পেয়েছেন একাধিক পদ।

এ দিকে এমন মনগড়া কমিটি নিয়ে থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, টাকার বিনিময়ে অপরিচিত মুখ, প্রবাসী ও একাধিক মামলার আসামিকে পদে আনা হয়েছে।

এর আগে গতকাল সোমবার (৩১ জুলাই) কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য চৈতালি চক্রবর্তী ও মিরাজ বিল্লাহের স্বাক্ষরিত এক প্যাডের মাধ্যমে এ কমিটিগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়।

দলের নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিতে নজর পরেছে কেন্দ্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের। পরবর্তীকালে কয়েক দফার আলোচনার মাধ্যমে সর্বশেষ মার্চ মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পরামর্শে থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির জন্য কাগজ জমা নেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন।

কাগজ জমার প্রায় পাঁচ মাস পর গতকাল ওয়ার্ড কমিটির ঘোষণা করা হয়।তবে আশানুরূপ না হয়ে উল্টো ভিন্ন রূপ দেখা গিয়েছে।

এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাষ্য, তাদের স্বাক্ষরিত কাগজের মূল্যায়ন করা হয়নি। বরং দলের বাহিরের লোকজনকে পদে আনা হয়েছে। যা বর্তমানে দলের মধ্যে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

অনুমোদিত কমিটির কাগজে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের (নাসিক) ১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে মো. খবির হোসেন রানাকে সভাপতি ও মো. শফিকুর রহমান জনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

এ দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসা এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কোন নেতাকর্মীরা চেনেন না বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি সহ-সভাপতি পদে থাকা একজনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে এবং প্রচার সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে এক প্রবাসী যুবককে।

অভিযোগ করা হচ্ছে, নাসিকের ২নং ওয়ার্ড কমিটির পদে আসা অধিকাংশের রাজনৈতিক পরিচয় অজ্ঞ। দলের সিনিয়র নেতারা রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয়দের নাম উল্লেখ করে কেন্দ্র কাগজ জমা দেয়া স্বত্বেও কাউকে মূল্যায়ন করা হয়নি।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে নাসিকের ৫নং ওয়ার্ড। ওই এলাকার ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. আল-আমীন শেখ নামক এক ব্যক্তিকেই দুটি পদ দেয়া হয়।

৬নং ওয়ার্ডের ২০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি মো. আক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইফতেখার হোসেন রাজু। এ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থাকা আক্তার হোসেন ওরফে পানি আক্তারের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১১টি মামলা রয়েছে।

৫নং এর মতো নাসিকের ৭নং ওয়ার্ডেও একই কাজ করা হয়েছে। ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে একই ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে কয়েকটি পদে। ওই কমিটিতে মো. শাকিল মাহমুদন নামে এক ব্যক্তিকে সহ-সভাপতি ও অর্থ বিষয়ক সম্পাদক পদে, আমিনুল ইসলাম নামক আরেক জনকে সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবং মনিরুজ্জামানকে সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদকের পদে রাখেন।

বাদ যায়নি ৯নং ওয়ার্ডও। ২৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সালাউদ্দিন নামের একজনকে সহ-সভাপতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকে পদে রাখা হয়েছে।

বহুদিন পরে ঘোষণা হলেও এমন আজগুবি কমিটি নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে নেতাকর্মীরা শুরু করেছেন নানান আলোচনা-সমালোচনা।

মনগড়া ও বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটির বিষয়ে একাধিক পদ-বঞ্চিত অভিযোগ তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করেছে। আমরা দলের জন্য নির্যাতিত হয়েছে এমন কমিটি আমরা মানি না। কমিটি বাতিল না করা হলে আমরা বিক্ষোভ করবো।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মানিক মাষ্টার বলেন, আমার তেমন কিছু ধারণা নাই এ বিষয়ে। তবে আমি যতটুকু জানি আমাদের থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী যে কাগজগুলোতে নিয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে আমার এলাকা ৬নং ওয়ার্ডের কমিটি আমরা যা দিয়েছি সেটাই এসেছে।

এমন কমিটির বিষয়ে সাবেক থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রার্থী আমিনুল হক রাজু জানান, এমন কমিটি ঘোষণা হবে আমরা কল্পনাতেও ভাবিনি। দীর্ঘ ১ বছর যাবত ওয়ার্ড কমিটির জন্য কেন্দ্রের নেতাকর্মীদের কাছে যাচাই-বাছাই করে কাগজ জমা দিয়েছি। আমাদের থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাকর্মীদের পরামর্শে নাম দেয়া হয়েছিল শাহানারা ইয়াসমিন আপার কাছে। তবে আমরা যে কাগজ দিয়েছিলাম সেটার সঙ্গে কমিটির কোন মিল নেই। বহিরাগতদের কমিটির পদে রাখা হয়েছে। তার উপর সিনিয়র জুনিয়র না মেনেই যাকে তাকে ভাইটাল পোস্টে দেয়া হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি যেহেতু কেন্দ্রের নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন সেখানে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। শুনেছি কমিটিতে বহিরাগত ও বিতর্কিত লোককে পদে আনা হয়েছে। আসলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। সে ক্ষেত্রে কমিটির বিষয়টা একান্তই কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের। তবে আমরা আওয়ামী করি আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল তাদের। কিন্তু তারা কোনো পরামর্শ ছাড়াই এমন কমিটি ঘোষণা করেছে।

থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শাহানারা ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কমিটির বিষয়ে আমার বক্তব্য দেয়ার কিছু নেই। আমাকে ওইখান থেকে কমিটির জন্য নামসহ কাগজ দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড