• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |  
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফাইল বন্দি প্রকল্পে ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষতি-সরকারি ব্যয়

  রিয়াজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

২৬ জুলাই ২০২৩, ১৩:৪৯
ফাইল বন্দি প্রকল্পে ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষতি-সরকারি ব্যয়

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার নদী তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ কি. মি. দীর্ঘ ও দেড় কি. মি. আয়তনে নদীভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে আক্রান্ত ওই তিনটি ইউনিয়নের চারটি মৌজা সম্পূর্ণ এবং আরও তিনটি মৌজার আংশিকসহ প্রায় ১৫ হাজার একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

এছাড়াও বিলীনের অপেক্ষায় দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ মহাসড়কটি ছাড়াও চরম ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ ও ভেড়ামাড়া ৪১০ মে. ও. কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি।

জেলার প্রনিনিধিত্বশীল মহলের অভিযোগ সময় মতো প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) বাস্তবায়ন না হওয়ায় বছর জুড়ে বিরতিহীন ভাঙ্গনে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারী ব্যয়ের বোঝা। এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেই সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন ডিপিপি অনুমোদন পেলেই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।

মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কেরামত মণ্ডল বলেন, জাগা জমিন, ঘর বাড়ি, গরু বাছুর সব এখন পদ্মার প্যাটে। ৩ বছর আগেত্তি গাং য্যাকন ভাঙ্গা শুরু করে, তেখন তিন কতজনকে বুল্লাম, কাকুতি মিনতি কল্লাম, কেউ শুনলো না, তারা কুনো গুরুত্বই দিলি না। শুরুত্তিন যদি ইরা কোনো ব্যবস্থা লিতি তালি আইজ এই অবস্থা হইতি না। আমার মতো ম্যালা লোক সবকিছু হারাইচে। যে কাম অল্পত্তিন হতি, সেই কাম এখন অনেক বাইড়ি গেছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার সরকার বলেন, তালবাড়িয়া পদ্মা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষনিক ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও কোনো কাজে আসছে না ভাঙন রোধে। তাই দ্রুত প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্পের (ডিপিপি) অনুমোদনসহ তার বাস্তবায়নই হবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।

ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠুর অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে দুই উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকা ও গোটা জনপদকে রক্ষায় এখনই দরকার স্থায়ী সমাধান। নচেৎ একদিনে জনজীবনের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতির সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারী ব্যয়ের বোঝা হবে আকাশ ছোঁয়া।

তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মণ্ডল বলেছেন, আমার এই ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন এখানে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও তো ওইসব ঘরবাড়ি, জায়গা জমি, রাস্তাঘাট হাট বাজার কোনো কিছুই ফিরিয়ে আনা যাবে না। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রার্থনা জরুরি এই ভাঙন বন্ধে স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. এসএম মুসতানজিদ বলেন, আমরা জানি প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, আজকে কুষ্টিয়াতে নদী ভাঙ্গনের যে সংকট দেখা দিয়েছে, এই সংকট শুরুর দিকে যে আয়তনকে আক্রান্ত করেছিলো তখনই যদি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হতো তাহলে ওই দিনে শুরু হওয়া ছোট্ট সংকটটি আজকে এতো বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ধ্বংস হতো না। আমরা দেখেছি গত দুই বছর আগে এখানে যে ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় প্রেরণ করা হয়েছিলো তার প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিলো নয়শ ৮৯ কোটি টাকা যা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে ওই একই প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার আটশ ১৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা যা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। এবারও যদি প্রস্তাবিত এই উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) অনুমোদনসহ বাস্তবায়ন না হয়ে ফাইল বন্দি থেকে যায়; তাহলে খুব শীঘ্রই সরকারী ব্যয় ক্রমবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মহাসড়ক, সেচ প্রকল্প, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও লালন শাহ সেতুসহ সরকারের আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার অবকাঠামোসহ স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে পদ্মার গর্ভে।

বাপাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর এবারের ভাঙন এতই তীব্রতা পেয়েছে, যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত: ভাঙনের তীব্রতা ঠেকাতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে প্রেরিত ডিপিপি প্লানিং কমিশনে যাচায় বাছায় শেষে একনেক সভায় অনুমোদন পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড