• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কোটি টাকার সরকারি খাস জমি দখলের ঘটনায় নির্বিকার প্রশাসন

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

২৬ জুলাই ২০২৩, ১২:১৬
কোটি টাকার সরকারি খাস জমি দখলের ঘটনায় নির্বিকার প্রশাসন
দখল হওয়া কোটি টাকার সরকারি খাস জমি (ছবি : অধিকার)

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর বাজারে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি জবরদখল করে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। সরকারি ভূমি অফিসের সামনেই দখলবাজি চললেও মুখে কুলুপ এঁটেছে স্থানীয় কর্মকর্তারা। ফলে পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ্জামালের।

তার বিরুদ্ধে একের পর এক জমি দখল, নৌকার মাঝিকে অপহরণ করে গুম করা, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের চাকুরিচ্যুতির হুমকি, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যদের উপর হামলা, এক প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম, নিরীহ পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে দুটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ভূড়িভোজকরণসহ একাধিক অপকর্ম করেও কোনো সুবিচার না পাওয়ায় এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়া। বর্তমানে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সাবেক এই নেতা।

সর্বশেষ এই বেপরোয়া ব্যক্তি কর্তিমারী বাজারের পানি নিষ্কাশনের জলাশয় দখল করে তার উপর আরসিসি পিলার গেঁথে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। ইতিমধ্যে এই জমির কিছু অংশ বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আর এই কাজে জাল দলিল তৈরি করে সরকারি খাস জমি নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে করছেন অপকর্ম।

যাদুরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনেই সরকারি জমি অবৈধভাবে বিক্রি ও দখলের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘মন্ত্রীর বড় ভাই’ পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া একের পর এক অপরাধ করে চলেছেন। মামলা দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না তাকে। ফলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার অপকর্মের সংখ্যা শুধু বেড়েই চলেছে। তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের রয়েছে একাধিক অভিযোগ। আজাহার মণ্ডল নামের এক নৌকার মাঝিকে অপহরণ ও গুমের মামলা (দায়রা নম্বর ৪৩৮/১৭) রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে যৌথ অভিযান চালায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্য ও উপজেলা প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, এ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালান সুরুজ্জামাল ও তার ছেলেরা। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সরকারি স্কুলের এক প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিরীহ পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে দুটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে সমর্থকদের ভূড়িভোজ করান। এছাড়াও ২০২২ সালের ৩১ মে লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ বিল না দিতে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করে এলাকায় মাইকিং করেন তিনি।

তার দাবি, একই বছরের ২৮ মার্চ তার ছেলের কাগজপত্রহীন মোটরসাইকেল আটকানোয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুতি করার হুমকি দেন জনসম্মুখে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বন্ধ রাখার মুচলেকা দিলেও এখনো অব্যাহত রেখেছেন নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ব্যবসা।

এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলির কথা বলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতো অপকর্মের পরও দল থেকে নেয়া হয়নি কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা। উল্টো বিতর্কিত এই নেতাকে পুরস্কার হিসেবে দলীয় পদে পদোন্নতি দেবার সুপারিশ করছে একটি মহল।

অভিযুক্ত সুরুজ্জামালের উত্থান : ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাঁকির হোসেন এমপি নির্বাচিত হলে তার অনুসারী হয়ে ‘এমপির বড় ভাই’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন সুরুজ্জামাল মিয়া। বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের পদ-পদবি। সেই থেকে শুরু হয় তার অপরাধ জগতের রাজত্ব। একজন ‘ছ’মিল মিস্ত্রি থেকে কোটিপতি বনে যান সুবিধাভোগী এই নেতা। এর আগে তিনি কুড়িগ্রামের সাবেক এমপি গোলাম হোসেনের সাথে জাতীয় পার্টি এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও উপজেলা বিএনপির এক নেতার অনুসারী ছিলেন।

কর্তিমারী বাজারের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ভুমিদস্যু সুরুজ্জামালের কাছ থেকে জায়গা কেনার কথা অস্বীকার করলেও গোডাউন ঘর ভাড়া নেবার কথা স্বীকার করেছেন।

অপর রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী সুরুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামালের কাছ থেকে স্ট্যাম্প মূলে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে ১০বাই ২০ হাত জমি নিয়েছি দোকান ঘরের জন্য। সরকারি জমি কিনা আমার জানা নেই।

আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া বলেন, সরকারের সাথে কেস করে আমি রায় পেয়েছি আমি। আমার তিনটি বাড়ি রয়েছে। আমি কাগজপত্র এসিল্যান্ড, এডিসিসহ কর্মকর্তাদের দেখিয়েছি কোনো সমস্যা নেই। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

কর্তিমারী বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, সুরুজ্জামালের দখলকৃত জলাশয়টি সরকারি সম্পত্তি। সে অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও বিক্রি করছেন। এই নিয়ে আমরা ভূমি অফিসকে বার বার বলেছি। কিন্তু তারা অদৃশ্য শক্তির কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সাবেক এমপি রুহুল আমিন জানান, কর্তিমারী বাজারের সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করার বিষয়ে এসিল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করেছি। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এই সরকারি সম্পত্তি দখল করে টাকার পাহাড় গড়ায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব ফেলবে। কেননা সরকারি সম্পদ রক্ষার করার যোগ্যতা যদি স্থানীয় প্রশাসনের না থাকে জাতি তাদের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করতে পারে না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড