• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তথ্য গোপন করে চাকুরির ঘটনায় চার্জশিট দিল দুদক

  কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী (বরগুনা)

১১ জুলাই ২০২৩, ১২:৪০
তথ্য গোপন করে চাকুরির ঘটনায় চার্জশিট দিল দুদক

তথ্য গোপন করে চাকুরি নেয়ায় অভিযোগে বরগুনার আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে। এছাড়াও ওই বিদ্যালয়ে ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে জালসনদে চাকুরি করার আরও একটি মামলা দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে ও তাদের একাডেমিক সনদগুলো জব্দ করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম জাল জালিয়াতি ও প্রকৃত তথ্য গোপন করে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরী করায় স্থানীয় মো. আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তি বরগুনা স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করলে (যার নং ৪/২২-২০২০) আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে প্রেরণ করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান তদন্ত শেষে মো. জাহাঙ্গির আলমের নিয়োগ অবৈধ প্রতারনার মাধ্যমে করা হয়েছে বলে আদালতে (পেনাল কোর্ডের ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ বিচারের জন্য) চার্জশিট প্রদান করেছেন।

এছাড়াও অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের ভূয়া শিক্ষাগত সনদ দিয়ে চাকুরি নেয়ায় একই বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক রেজাউল করিম, দিলিপ কুমার, মো. শাহাবুদ্দিন ও হোসনে আরার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. বশির উদ্দিন হাওলাদার। ওই মামলাটিও আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে দুদক। তদন্ত কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের জালসনদগুলো জব্দ করা হয়েছে। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।

বরগুনা স্পেশাল জজ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলম ০১/০৫/২০০৬ তারিখে মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ সালে দাখিল পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ, ১৯৮৪ সালে আলীম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ এবং ১৯৮৬ সালে ফাজিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে পাশ করেছেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের ক্ষেত্রে একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ গ্রহনযোগ্য না হওয়া সত্বেও তিনি নীতিমালা বহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে তিনি ১৫/০৮/১৯৯৩ খ্রি. হতে ৩০/০৮/২০০৬ খ্রি. পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া আলিয়া মাদরাসায় করনিক হিসেবে চাকুরী করা সত্তে¡ও করনিকের অভিজ্ঞতা জালিয়াতি করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেন।

চার্জশিটে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান উল্লেখ করেন, তদন্তকালে জব্দকৃত ও সংগৃহিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলম গত ২৭/০৪/২০০৬ খ্রি. সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম শিক্ষা) পদে মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদান করেন। যোগদানকালে তিনি তার পূর্ববর্তী ইনডেক্স নং ৬৬১২৩১ ব্যবহার করেন। জাহাঙ্গীর আলম ১৯৮২ সালে দাখিল পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ, ১৯৮৪ সালে আলিম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ, ১৯৮৬ সালে ফাজিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ এবং ১৯৮৯ সালে কামিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছেন মর্মে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বিশ্লেষণে দেখা যায়।

জাহাঙ্গীর আলম ২০০৬ সালে নিয়োাগ লাভ করেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং শিম/শা-১১/৮ বিবিধ (এমপিও)-১১/২০০৪/০৬, ০৮/০১/২০০৫ খ্রি. তারিখ এর বেসরকারী শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির নীতিমালা অনুসারে দেখা যায় যে, সমগ্র শিক্ষাজীবনে যে কোনো একটি তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণীপ্রাপ্ত শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। উক্ত আদেশ মোতাবেক বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলম সহকারী মৌলভী (ইসলাম ধর্ম শিক্ষা) পদে নিয়োগ বৈধ নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এছাড়া মো. জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য অনুসারে ০১/১২/১৯৮৬ খ্রি. হতে ১৪/০৮/১০৯৩ সাল পর্যন্ত হরিণখোলা চরপাড়া দাখিল মাদরাসা, আমতলী, বরগুনায় সহকারী মৌলভী হিসেবে চাকুরী করেছেন, যার ইনডেক্স নম্বর ৩৫২৮৩১। এক্ষেত্রে বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলমের নিয়োাগকালীন চলমান ১৯৮২ সালের বিধি অনুযায়ী ০৬ মাসের অধিক বিরতিকাল থাকলে পূর্বের অভিজ্ঞতা অকার্যকর হয়। এক্ষেত্রে সহকারী মৌলভী পরে উক্ত ইনডেক্স নম্বর ১৫/০৮/১৯৯৩ সাল থেকে অব্যবহৃত, ফলে ২০০৬ সালে উক্ত অভিজ্ঞতা অকার্যকর হয়েছে।

মামলা তদন্তকালে বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলম জেলা শিক্ষা অফিসার, বরগুনার স্মারক নং ৩৭,০২,০৪০০.০০০.০২.০০১.২১.৫২, ২৪/০১/২০২১ খ্রি. জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন কর্তৃক স্বাক্ষরতি একটি পত্রের মাধ্যমে তার নিয়োগকালীন ৬৬১২৩১ নং ইনডেক্সে ভুল থাকার কারণে উক্ত ইনডেক্সের পরিবর্তে ৩৫২৮৩১ নং ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত করা বিষয়ে একটি কাগজ দাখিল করেন।

দাখিলকৃত উক্ত রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা যায় তার দাখিলকৃত ইনডেক্স নম্বর পরিবর্তন করা সংক্রান্ত কাগজটি সঠিক নয়। জেলা শিক্ষা অফিসারের স্ক্যানকৃত স্বাক্ষর ব্যবহার করে স্মারক নং পরিবর্তন করে ভুয়া জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পত্রটি সৃজন করা হয়েছে।

তদন্তকালে জন্মকৃত ও সংগৃহিত রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে, বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা মন্ত্রনালযের ২০০৫ সালের মন্ত্রনালয়ের সরকারী আদেশ লংঘন করে ২টি তৃতীয় বিভাগ নিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে অফিস সহকারীর ইনডেক্স ব্যবহার করে গত ২৭/০৪/২০০৬ খ্রি. সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করে পেনাল কোডের ৪২০ ধারার অপরাধ সংঘঠন করেছেন।

একইসাথে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরগুনার স্ক্যানকৃত স্বাক্ষর এবং জেলা শিক্ষা অফিস, বরগুনার ভুয়া স্মারক ব্যবহার করে জাল রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক তা ব্যবহার করে পেনাল কোডের ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারার অপরাধ সংঘঠন করেছেন। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান বর্ণিত অপারাধের দায়ে বিবাদী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে বিচারার্থে চার্জসিট প্রেরণ করেন।

ওই বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী মৌলভী (ইসলাম ধর্ম শিক্ষা) মো. জাহাঙ্গীর আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহআলম কবির বলেন, জাল জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে শিক্ষকের চাকুরি নেয়ার সত্যতা পাওয়ায় বিদ্যালয়ের সহকারী মৌলভী (ইসলাম ধর্ম শিক্ষা) মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জালসনদে চাকুরি নেয়ায় অপর আরেকটি মামলায় বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষকের একাডেমিক সনদ দুদক জব্দ করেছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড