মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। নদীর পানি কমা-বাড়ায় সব কটি জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (৩০ জুন) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ১৭ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় পানি কমে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে জানান, কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক নিচে ছিল। গতকাল রাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করলে সকাল ৬টায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করে। আবার সকাল ৯টার দিকে কমে বর্তমানে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে তিস্তার পানি। আর পানি বাড়ার সম্ভাবনা নাই কমে যাবে।
এ দিকে পানি বাড়া কমার কারণে তিস্তা নদীর উজানে বেড়েছে ভাঙন। ভাঙনে নদী পেটে চলে গেছে ফসলি জমি, বাড়ি ভিটা। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা মুন্সিপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর ডান তীরে জ্যামিতিক হারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙছে বুনো ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলি জমি, বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পৈত্রিক ভিটে-মাটি আর হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা গ্রামের ওমর আলী দৈনিক অধিকারকে বলেন, প্রায় ৭ বছরে তিনবার ভাঙতে হয়েছে বাড়িভিটা প্রথম ভিটা কেনা হলেও পরে ঘর বাঁধতে হয়েছে অন্যের জমিতে। এবারও নদী ঘরে কাছে চলে এসেছে, দুই একদিনের মধ্যে এখান থেকে বাড়িঘর ভেঙে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় নতুন করে ঘর উঠাবো সেরকম তো জায়গা পাচ্ছি না। আমার তো সামর্থ্যও নাই জমি কেনার।
একই গ্রামের নুর আলম দৈনিক অধিকারকে বলেন, এবারের বর্ষায় উজান থেকে আসা পানিতে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে তাতে প্রায় ১০ থেকে ১২ একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও বসত ভিটে হারাতে হয়েছে আলী আকবর, ওমর আলী, আব্দুল কাদের ও জামিরন নেছাকে।
খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার কেঞ্জুল দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমি অসুস্থ তাই সরাসরি মাঠে যেতে পারিনি তবে শুনেছি কয়েকটি বাড়ি নাকি ভেঙেছে আর আবাদি জমি ভেঙেছে। অসুস্থ থাকার কারণে কোথাও যেতে পারছি না।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান দৈনিক অধিকারকে বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি ওঠানামা করলেও বাড়িঘরে এখনো পানি ওঠেনি। তবে বিস্তীর্ণ এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫ চরগ্রামের মানুষ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা দৈনিক অধিকারকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়া কমার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ছোটখাতা এলাকার উজানেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা সেখানে পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। স্যারদের অনুমতি পেলে আমরা ভাঙ্গন এলাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে জিও ব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। যদি খুব ভাঙ্গন দেখা দেয় আমরা প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু বর্ষাকাল তিস্তা নদীর পানি সামনে আরও বাড়তে পারে। পানি বাড়বে এরকম পূর্বাভাস রয়েছে আমরা এবিষয়ে সতর্ক আছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড