• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুরবানির মাংসের ভ্র্যাম্যমান হাটে নিম্নবিত্তদের মুখে হাসি

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

৩০ জুন ২০২৩, ১১:১৪
কুরবানির মাংসের ভ্র্যাম্যমান হাটে নিম্নবিত্তদের মুখে হাসি
ভ্র্যাম্যমান হাটে নিম্নবিত্তদের কাছে কুরবানির মাংস বিক্রি করা হচ্ছে (ছবি : অধিকার)

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কুরবানির মাংসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ভ্র্যাম্যমান মাংসের হাট। তবে বাজারে মাংসের দামের তুলনায় এ হাটে চড়া দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার যারা কুরবানি দিতে পারেনাই কিংবা কারো কাছ থেকে হাত পেতে মাংস আনতে পারে নাই এমন লোকজন হাট থেকে চড়া দামে মাংস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে আবার অনেকেই মাংস না কিনে একদম খালি হাতেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী ভ্র্যাম্যমান কুরবানির মাংসের হাট। কুরবানির মাংস কেনাকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে হাটটি। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাটে ৭/৮শ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। যা বাজার মূল্যর চেয়ে সামান্য বেশি। তবে ক্রেতা বলছেন ৭শ টাকা দরে বাজার থেকে ফ্রেস মাংস কেনা যায়। বাজারের তুলনায় এ মাংসের দাম বেশি।

জানা যায়, ভৈরবে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কুরবানির মাংস বেচা-বিক্রিকে ঘিরে ইদের দিনে এ হাটে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাংস বিক্রি করা হয়। বন্দর নগরী ভৈরব প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম শহর হিসেবে এখানকার ব্যবসায়ী ও মানুষ হাট থেকে বড় ধরনের গরু মহিষ কিনে কুরবানির করেন। কুরবানির সেই গোশত নিতে আশ-পাশের অনেক জেলা ও উপজেলার নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজন ভৈরবে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে মাংস সংগ্রহ করে। আবার কেউ কেউ কুরবানির গরু জবাই করে কাজের বিনিময়ে মাংস পেয়ে থাকেন। এসব মাংস পরিবারের খাবারের জন্য কিছুটা রেখে বাকি মাংস হাটে এনে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে কম দামে বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটান। আর মধ্যস্বত্ব ভোগীরা চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। আবার অনেক গরীব-অসহায় লোকজন সংগৃহিত মাংস রান্নার মসলা কেনার টাকা যোগাড় করতে না পারায় বাধ্য হয়ে মাংস বিক্রি করে থাকেন।

মাংস বিক্রি করতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, আজ ইদের দিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাংস সংগ্রহ করেছি। দুইটি সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। তাছাড়া মাংস রান্না করতে মসলা প্রয়োজন। কিছু খাওয়ার জন্য রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। কিছু হাত খরচ পাওয়ার আশায়।

বিক্রেতা মশিউর বলেন, ভৈরব শহরের ভৈরবপুর এলাকায় গরু জবাই করে মাংস কেটে দিয়ে তাদের কাছ থেকে ২০ কেজি মাংস পেয়েছি। এত মাংস রাখার জায়গা নাই। মাংস রান্নার মসলা, চাউল, ডাউল ও কিছু হাত খরচের টাকার জন্য ১০ কেজি মাংস বিক্রি করতে এসেছি। ভাল দামে বিক্রি করবো।

বিক্রি করতে আসা বাজিতপুরের নোমান, মানিকখালির রমজান, ও ভিক্ষকু জামিলা বলেছেন, আমাদের ঘরে ফ্রিজ নেই। সেই সাথে নেই মসলা কেনার টাকা। কেজিতে ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে তাই বিক্রি করে দিয়েছি কোরবানীর মাংস। কিছু নগদ টাকা পেলে কিছু দিন চলতে পারব।

হত-দরিদ্রদের থেকে মাংস কিনে বিক্রি করছিলেন ওমর ফারুক ও নাসির মিয়া। তারা জানান, সীমিত লাভে কিনে মাংস বিক্রি করছি। ৬৫০ টাকায় কিনে ৮০০ টাকায় বিক্রি করে দিলাম।

প্রতি বছরই ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হতদরিদ্ররা ভৈরব আসেন। দিনভর মাংস সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। এখানে ক্রেতারা দরিদ্র পরিবারের সদস্য। মধ্যবিত্ত ও হোটেল মালিকরাও এখান থেকে মাংস কিনি নিয়ে যায়।

ক্রেতাদের মধ্যে পৌর শহরের চণ্ডিবের ব্যপারি পাড়ার তাজুল ইসলাম ও উপজেলার আগানগরের ইসমাইল ও শিবপুরের সখিনা জানান, আমাদের সামর্থ নেই কুরবানি দেয়ার। লজ্জায় কারো কাছে চেয়ে নিতে পারি না। লক্ষ টাকা কুরবানি না দিতে পারলেও ৪/৫ কেজি মাংস কেনার সামর্থ আছে। এখান থেকে কম দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। বাজারে গরুর মাংস ৮শ টাকা এখান থেকে ৬শ টাকায় কিনি নিচ্ছি। আবার কয়েকজনে ৮শত টাকায়ও বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে ভৈরব পৌরসভার মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু জানান, কুরবানির ইদে নিম্নবিত্ত যারা কুরবানি দিতে পারে নাই তারা এ হাট থেকে মাংস কিনে নেয় পরিবার-পরিজনের জন্য। তবে একদিনের জন্য অস্থায়ী এ হাটটি পৌরসভার পক্ষ থেকে ট্যাক্স মুক্ত বসার ব্যবস্থা করা হবে। এ হাটটি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই উপকার।

উল্লেখ্য, ভৈরবে এ বছর প্রায় ১০ হাজার গরু–মহিষ-ভেড়া-ছাগলকে কুরবানি করা হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড