• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

টুং-টাং শব্দে মুখরিত চারপাশ

ইদের আগে কামারপল্লীতে বেড়েছে শেষ সময়ের ব্যস্ততা

  মো. মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

২৭ জুন ২০২৩, ১১:২৮
ইদের আগে কামারপল্লীতে বেড়েছে শেষ সময়ের ব্যস্ততা
কামারপল্লীতে চলছে শেষ সময়ের ব্যস্ততা (ছবি : অধিকার)

পবিত্র ইদুল আযহাকে সামনে রেখে শেষ সময়ের ব্যস্ততা বেড়েছে নরসিংদীর কামার পল্লীগুলোতে। টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে জেলার বিভিন্ন এলাকার কামারপল্লী। দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কুরবানির ইদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। নতুন দা, চাপাতি, ছুরি ও বটি তৈরির পাশাপাশি চলছে পুরাতনগুলোতে শান দেওয়ার কাজ।

নরসিংদী রেলস্টেশন, তড়োয়া, চরনগরদী বাজার, মাধবদী পুরাতন রেলস্টেশন রোড ও গরুর হাটের বটতলার ছোট-বড় সব হাটের কামাররা এখন মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইদকে ঘিরে বাড়তি মুনাফার আশায় ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে টুং-টাং আওয়াজের তালে তালে চলছে তাদের কাজ।

নগরীর চরকা চত্বর, রেলস্টেশন রোড ও হাজী সফিউদ্দিন রোড এলাকাসহ অন্যান্য কামারপল্লীর কামারদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। একের পর এক ক্রেতা এসে দোকানে ভিড় করছেন। ফলে তাদের দোকান ছেড়ে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তাই সকাল, দুপুর বা রাতের খাবার তারা দোকানে বসেই সেরে নিচ্ছেন।

দীপক কর্মকার বলেন, এটি আমার পারিবারিক পেশা। দীর্ঘ ৪০ বৎসর ধরে আমি এ পেশায় নিয়োজিত আছি। ইদের পূর্বে প্রতিদিন গড়ে ২/৩ হাজার টাকার কাজ হতো। তবে ইদ আসার সাথে সাথে কর্ম ব্যস্ততার পাশাপাশি আয় ও বেড়েছে। কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পর ও দৈনিক ৫/৭ হাজার টাকা আয় হয়।

কামার শিল্পী মো. শরীফ মিয়া বলেন, আগে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হতো। ইদকে সামনে রেখে এখন প্রতিদিন ৮/১০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়।

মো. রতন মিয়া নামে আরেক কামার বলেন, পূর্বের তুলনায় এখন নতুন মালামালের বিক্রি অনেক কম। দা, ছুরি, চাপাতিসহ কোরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন নতুন সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখলেও তেমন বিক্রি নেই। গত বছর এ সময়ে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করলেও এ বছর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা ও বিক্রি করতে পারিনি।

মো. মনির হোসেন বলেন, লোহার দাম বাড়ার কারণে বেচা বিক্রি অনেক কম। দোকানে বহু টাকার মালামাল তুলে রেখেছি কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা নেই তাই চিন্তায় আছি।

তিনি আরও জানান, একটি বড় দা মজুরিসহ ১০০০/১২০০ টাকা, একটি কুঠার ৫০০/৬০০টাকা, চাপাতি প্রকার ভেদে ৪৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, বিভিন্ন আকারের ছোরা একশ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

স্বপন মণ্ডল বলেন, সারাবছরই আমাদের তৈরি মালামালের কমবেশি চাহিদা থাকে। তবে কুরবানির ইদে পশু কুরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকুর কদর অনেক বেড়ে যায়। ইদকে সামনে রেখে বড় দোকানগুলোতে প্রতিদিন ৮০/৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আমি প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

ইদের চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করতে গিয়ে আমাদের রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। কুরবানির ইদের পূর্বদিন পর্যন্ত তাদের এই কর্মব্যস্ততা থাকবে বলে ও জানান তিনি।

এম এস জামান ভূঁইয়া বলেন, দা, ছুরি ও বঁটি কিনতে এসে দেখি দাম অনেক বেশি যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব এখানে ও পড়েছে। যেহেতু সামনে ইদ তাই দাম বেশি হলেও কিছুই করার নেই।

অন্যান্য ক্রেতাদের ও একই অভিযোগ। তারা বলেন- পুরনো দা, বটি ও ছুরিতে শান দেয়ার জন্য কামাররা ১৫০ টাকা থেকে দুইশ টাকা করে নিচ্ছেন। অন্য সময় যার মজুরি ছিল ৫০ থেকে একশ টাকা। তাছাড়া পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য একটি ছোরা ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু ৫০ থেকে একশ টাকা, বটি চারশ টাকা থেকে আটশ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে এখন সকল মালামালের দাম দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড