• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আইডি কার্ডে বয়স কম, মিলছে না কোনো ভাতা

নিদারুণ কষ্টে কাটছে বৃদ্ধ কাদিরের জীবন 

  মো. সাগর মিয়া, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

২৬ জুন ২০২৩, ১৫:১০
নিদারুণ কষ্টে কাটছে বৃদ্ধ কাদিরের জীবন 

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের আড়াইবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল কাদির। তার বয়স আশি ছুঁইছুঁই। দুই মেয়ে ও এক ছেলে হাবাগোবা। মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়েছেন এবং একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছেলে বউকে নিয়ে আলাদা সংসারে চলে যায়। তাই এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি একা।

সংসারের হাল ধরার আশায় বুক বেঁধেছিল যে ছেলেকে নিয়ে, আজ সেই ছেলে ফিরেও তাকায়নি বাবার দিকে। নিদারুণ অসহায়ত্বের মাঝে কাটছে দিন। প্রত্যুষে সামান্য পরিমাণ মটর, ছোলা কিংবা কটকুটি নিয়ে বাউক কাঁধে নিয়ে বের হন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তার ক্রেতা। হাতে ডুকডুকি বাজিয়ে শব্দ দিলেই ছুটে আসে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা।

কেউ প্লাস্টিকের বোতল, কেউবা লোহা লস্কর দিয়ে কটকুটি কিনতে আসে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফিরে সামান্য বোতল, লোহা লস্কর সংগ্রহ করে দিন শেষে মহাজনের নিকট বিক্রি করেন কাদির। মহাজনেও সময় মতো টাকা দেয় না। অধিকাংশ সময় শূন্য হাতেই ফিরতে হয় বাড়িতে। যেদিন খালি হাতে বাড়িতে ফিরেন ঐদিন আর উনুনে পাতিল বসে না। ফলে অনাহারে, অর্ধাহারে নিদারুণ কষ্টে কাটছে কাদিরের জীবন।

এই বৃদ্ধ বয়সে যেখানে মানুষ গৃহে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার কথা, সেখানে কুঁজো হয়ে বাউকে মালামাল নিয়ে চলাফেরা খুবই কষ্টকর। পেটে আহার নেই, ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করেন তিনি। কারো দয়ায় হয়তো জুটে একটা বিস্কুট আর চা, তাতে দিন চলে যায় তার। সারাদিন কষ্ট করে বাড়িতে ফিরে নিজে রান্না করে যাবতীয় কাজ করতে হয় তার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাদির বলেন, হারাদিন (সারাদিন) গেরামে গেরামে (গ্রামে গ্রামে) টুহাইয়া (কুড়িয়ে) লোহা-লষ্কর কাঁধে বাউকে বহন করে মহাজন নিকট বেইচ্চা (বিক্রি) যা পাই হেইডা দিয়ে নিজের ওষুধ ও খাবার কিনে শেষ হয়ে যায়। অসুস্থ শরীল নিয়ে বাউক নিয়ে বের হয়েছি। পেটের খাবার আর ওষুধ কিনতে হবে। কথাগুলো বলতে বলতে দুই চোখের অশ্রু চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার বয়স ৮০ কিন্তু ভোটার আইডিতে বয়স কম থাকায় এখন কোনো ভাতাই মিলছে না। কতবার অফিসে গেছি আমারে ফিরাইয়া দিছে আমার নাকি বয়স হয় নাই। একটা বয়স্ক ভাতা যদি পাইতাম তাহলে শেষ বয়সে ওষুধ আর দুই বেলা ভাত খেয়ে মরতে পারতাম। নিয়তি আমাকে কষ্টই দিলেন, সুখের ছোঁয়া দিলেন না!

এই বৃদ্ধ বয়সে কাঁধে বাউক নিয়ে গ্রামে গ্রামে আর ঘুরতে হবে না, একটু সুখের ছোঁয়া পেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে, এমন কেউ হৃদয়বান ও মানবতার পূজারী আছেন, যার সামান্যতম দয়ায় শেষ বয়সে বাড়িতে থেকে কিছু একটা করে বাকি জীবনটা কাটাতে পারে। হৃদয়বান ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এই বৃদ্ধকে সাহায্য পাঠাতে পারবেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. এহসানুল হক জানান, আব্দুল কাদেরের বয়স কম থাকায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড