মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক মামলায় তৎকালীন পুলিশের শিক্ষানবিশ এসআই মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক ও তৎকালীন পীরগঞ্জ থানার পরিচ্ছন্ন কর্মী মানিক দাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এ সময় তাদের ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেন বিচারক মামুনুর রশিদ। যা অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা ও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বুধবার (২১ জুন) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ ও শুনানি শেষে এ রায় দেন তিনি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নওগাঁ জেলার দরিয়াপুর গ্রামের মৃত জগি প্রামাণিকের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার মন্ডলাদাম গ্রামের মৃত বাদল দাসের ছেলে মানিক দাস।
২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর ৩৬(১) টেবিলের ১০(গ) ও ১৯(ক) ধারায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক ও পলাতক আসামি মানিক দাসকে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর ৩৬(১) টেবিলের ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১২ লাখ টাকা জরিমানা ও মাদকদ্রব্য আইনের ৩৬(১) টেবিলের ১৯(ক) ধারায় দোষী হওয়ায় অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
জরিমানার অর্থ আইন অনুযায়ী আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান করার জন্য ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়াও মামলার অপর আসামি মো. মাসুদ রানা বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক নির্দেশ গণ্যে খালাস প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয় ও আসামি মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিককে জেল-হাজতে প্রেরণ ও পলাতক আসামি মানিক দাসকে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২৩ জুন ২০১৯ সাল বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডস্থ উপজেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত পুরাতন ডাক বাংলোর ভিতর ডিবি পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা কালে ১নং আসামি মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট যার আনুমানিক মূল্য ১৫ লাখ টাকা এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয়ের নগদ ৫০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ও দুইটি সিম কার্ডসহ হাতেনাতে আটক করে এবং দুই নং আসামি মানিক দাসের কাছ থেকে তিন হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য নয় লাখ। এছাড়া একটি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও ঘটনাস্থল পুরাতন ডাক বাংলো আসামি হেলাল উদ্দিন প্রামাণিকের শয়ন ঘরে তল্লাশি করে খাটের নিচ থেকে দুই কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ হাজার টাকা। অভিযানে মোট আট হাজার পিস ইয়াবা, দুই কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
এতে ঘটনার দিন তৎকালীন ঠাকুরগাঁও ডিবির পুলিশ পরিদর্শক (নি:) রুপকুমার সরকার বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন।
পরবর্তীকালে তৎকালীন ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. ওয়াহেদ আলী তিনজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) টেবিলের ১০(খ)/১০(গ)/১৯(ক)/৪১ ধারায় ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে ২০২৩ সালের বুধবার ২১ জুন দুপুরে রায় প্রদান করেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র দায়রা জাজ মামুনুর রশিদ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শেখর কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে ও আদালতের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর কোর্টের তৎকালীন পুলিশের শিক্ষানবিশ এসআই মো. হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক ঠাকুরগাঁও সদর কোর্টে কর্মরত থাকলেও তিনি বসবাস করতেন পীরগঞ্জ উপজেলার পুরাতন ডাক বাংলোতে। সেখানে তৎকালীন পীরগঞ্জ থানার পরিচ্ছন্ন কর্মী মানিক দাসসহ হেলাল উদ্দিন প্রামাণিক মাদকের আস্তানা তৈরি করে। ডিবি পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ হাতেনাতে আটক হন তারা।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ ও উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত এ রায় দেন। আমি মনে করি এই রায় মাদকদ্রব্য রোধে একটি যুগান্তকারী রায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড