লেবু চাষে সৌদি ফেরত যুবকের বাজিমাত

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে লেবু চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শাহজালাল। জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দেশে এসে লেবু চাষে মনোনিবেশ করেন তিনি।

বর্তমানে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করে বছরে প্রায় তিন লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ইতোমধ্যে গ্রামের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা শাহজালালকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক লাল মিয়ার ছেলে শাহজালাল। ভাগ্য উন্নয়নের আশায় জমিজমা বিক্রি ও দেনা করে পাড়ি জমায় সৌদি আরব। কিন্তু বিধিবাম। ৮ মাস যেতে না যেতেই দেশে ফেরত আসেন শাহ জ্বালাল।

আত্মীয়-স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবের দেনা পরিশোধের চাপ আসতে থাকে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। শেষ সম্বল বিশ শতক জাগায় লেবু চাষের সিদ্ধান্ত নেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই লেবু থেকে লাভ আসতে থাকে।

ধীরে ধীরে আত্মীয় স্বজনের দেনা পরিশোধ করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। লেবু চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে ভাগ্য বদল করে এখন তিনি এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শাহ জ্বালালের বীজহীন লেবুর বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন বীজহীন লেবুর চাষ করতে।

সফল লেবু চাষি শাহ জ্বালাল বলেন, ২০২০ প্রবাসে গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দেশে এসে ২০ শতক জমি নিয়ে ওই জমিতে ২২০টি বীজহীন লেবুর কলমকৃত চারা রোপণ করি। চারা কেনা, চারা রোপণ, জমি প্রস্তুত, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ বিবিধ খরচ মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, পরের বছরেই ওইসব লেবু গাছে লেবুর ফলন শুরু হয়। এর পরের বছর বেশ চাহিদা ও দাম পাওয়ায় প্রায় এক লাখ টাকার লেবু বিক্রি করি। ২০২২ সালে প্রায় ২লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি।

শাহ জ্বালাল জানিয়েছেন, এ বছর লেবুর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও প্রচুর ফলন আশায় অধিক দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি সপ্তাহে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। ফলে তার মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজ রাজা জানান, এটি অল্প পুঁজিতে ভালো একটি চাষাবাদ ও লাভজনক। শাহ জ্বালাল এ লেবু চাষের সফলতা দেখে অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহ হয়ে উঠেছেন।

এ বিষয়ে হোসেনপুর উপজেলা উপ-সহকারী জাহিদ হাসান রণি বলেন, বীজহীন লেবু সারা বছর ফলন দেয়। এ লেবু অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ প্রচুর রস ও সুঘ্রাণ যুক্ত। একবার এ লেবুর চারা রোপণ করলে একাধারে ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত এ জাতের লেবু গাছে ফলন দেয়।

তিনি আরও জানান, এ লেবু চাষে যদি কেউ এগিয়ে আসতে চায় তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।