• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের নিয়োগ 

  আতিয়ার রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

০৭ জুন ২০২৩, ১৬:৫১
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের নিয়োগ 

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গোপনে বিএনপি-জামাত কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রার্থী প্রতি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট পদে অবেদন করে যাদের প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি বা নিয়োগ বোর্ডে ডাকা হয়নি তাদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।

এতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকগণ। নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় মো. বাবুল আক্তার মিঠু ও মো. ইসরাফিল হোসেন যৌথভাবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও তারা কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হোন।

কুষ্টিয়া জজ আদালত নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও ওই বিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক গত মঙ্গলবার (৬ জুন) গোপনে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে নিয়োগ বঞ্চিতরা অভিযোগে জানিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক স্থানীয় বিএনপি ও জামাত কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার শর্তে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ৩টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন।

কিন্তু মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এসব পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করেন আড়িয়া এলাকার বিএনপি কর্মী মো. জামাত আলী মণ্ডলের ছেলে মো. সুমন আল মামুন ও ওমরপুর এলাকার মো. বজলুর রহমানের ছেলে ফয়সাল আহমেদসহ নিকট আত্মীয়দের।

বিষয়টি জানাজানি হলে গোপন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে বড় গাংদিয়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন সচেতন নাগরিক নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। একই সাথে তিনি বর্তমান উন্নয়নের সরকারের বাইরে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত নেতা, কর্মী ও ক্যাডারদের নিয়োগ না দেওয়ার দাবী জানান।

এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে গোপন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে গত ১৩ এপ্রিল আবারও একই পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মো. বাবুল আক্তার মিঠু, মো. ইসরাফিল হোসেন, মামুনার রশিদ, বিদ্যুৎ খানসহ আরও অনেকে আবেদন করেন।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের প্রার্থীদের মাঝে প্রবেশপত্র সরবরাহ করলেও আবেদনকারী মো. বাবুল আক্তার মিঠু, মো. ইসরাফিল হোসেন, মামুনার রশিদ, বিদ্যুৎ খানসহ অনেককে প্রবেশ পত্র দেননি। প্রবেশপত্র না পেয়ে তারা দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহম্মদ আবু সালেকের কাছে অভিযোগ দেন।

অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি ৬ জুন দুপুরে মিরপুরে একটি স্কুলে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রধান শিক্ষকসহ নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দেন।

এর আগে নিয়োগ বন্ধ ও স্থগিতাদেশ চেয়ে বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন দৌলতপুর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন যার নং ২০৭/২০২৩। মামলাটি খারিজ হলে পরবর্তীকালে তিনি কুষ্টিয়া জজ আদালতে আপিল করেন যার নং ৯৯/২৩।

কুষ্টিয়া জজ আদালত আপিল শুনানির জন্য আগামী ১৮ জুন দিন ধার্য্য করেন এবং ওইদিন সকলকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। একই আদালত গত ৫জুন নিয়োগে কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিও দেন। আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আপিল শুনানির দিন ধার্য্য হওয়ার পরও তড়িঘড়ি করে গত ৬ জুন বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকসহ নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। যা আদালত অবমাননার সামিল।

নিয়োগের বিষয়ে জানতে বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রদের নিয়োগের বিষয়ে বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মামলার বাদী ফিরোজ আল মামুন বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিএনপি ঘরনার প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের ও মনোনীত লোকজনকে গত ৬জন নিয়োগ দিয়েছেন বলে শুনেছি।

আবার আবেদন করার পরও অনেককে তিনি প্রবেশপত্র দেননি। কিভাবে এসব অনিয়ম দুর্নীতি করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও দৌলতপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহম্মদ আবু সালেক বলেন, বড় গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নিয়োগের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কোনো কাগজপত্র আমারা পায়নি। ৬ জুন ডিজির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড