• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাদকে সয়লাভ দৌলতপুর : সন্দেহের তীর পুলিশের দিকে

  আতিয়ার রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

০৭ জুন ২০২৩, ১২:৩৭
মাদকে সয়লাভ দৌলতপুর : সন্দেহের তীর পুলিশের দিকে

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সর্বত্র মাদকে সয়লাভ হয়ে পড়েছে। চলছে রমরমা কারবারও। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই এ কারবার এখন জমজমাট রুপ ধারণ করেছে। হাত বাড়ালেই যেন মাদক হাতের মুঠোয় উঠে আসছে।

এ কারবারের সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় সব প্রভাবশালী মহলের পাশাপাশি প্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরাও। আবার এ মাদক নিয়ন্ত্রণে যাদের দেখভাল করার কথা তারাও আবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে।

বিশেষ করে পুলিশের সোর্স যারা মাদক উদ্ধার ও মাদক পাচারকারী বা ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে সেই পুলিশের সোর্সরাই এখন মাদক ব্যবসার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে পুলিশের সোর্সরাই মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আবার দৌলতপুর থানা পুলিশের সোর্সরাও নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা। এরা পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রকাশ্যে মাদক ক্রয় বিক্রয়ও করে থাকে।

ফলে গ্রাম, পাড়া মহল্লায় সর্বত্র গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও টাপেন্টাডল ট্যালেটসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট রুপ ধারণ করেছে। মাদক কারবারিদের পাশাপাশি থানা পুলিশের সোর্সরা এ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় মাদক উদ্ধারে বা মাদক ব্যবসায়ী বা পাচারকারীদের ধরতে পুলিশের ভূমিকা অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

পুলিশের সোর্সের সদস্যরা আসামি ধরতে সহয়তা করায় পুলিশের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বা গাড়িতে অবস্থান করে থাকেন তারা। যার কারণে সোর্সের অন্তরালে মাদক কারবারে জড়িত থাকায় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।

সচেতন মহলের অভিমত, সোর্সের কাজ হলো অপরাধী গ্রেফতারে বা মাদক উদ্ধারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করা। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকে। বিনিময়ে তারা আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব সোর্সরা অপরাধী ও মাদক কারবারিদের ধরিয়ে দিতে সহায়তার পরিবর্তে নিজেরাই মাদক কারবার বা অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়লে আপরাধ দমন বা মাদক ব্যবসা নির্মূল হবে কিভাবে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

দৌলতপুর থানা পুলিশের নিয়োগ করা প্রায় সব সোর্সই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এরা নিজেদের অবৈধ মাদক ব্যবসা নির্বিগ্ন করতে মাঝে মধ্যে প্রতিপক্ষ মাদক পাচারকারী বা ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের মাদক ব্যবসা নিরাপদ করে থাকেন এমন অভিমতও রয়েছে ভূক্তভোগীদের।

বিভিন্ন মহলের তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতপুর থানার পাশে হাসপাতাল চত্বর, মাষ্টারপাড়া, সেন্টারমোড় এলাকা, বিলপাড়া এলাকা, স্বরুপপুর ব্র্যাকপড়া, সাহাপুর, বেগুনবাড়িয়া, কল্যানপুর, মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, তারাগুনিয়া, সংগ্রামপুর, ঘোড়ামারা বাজার, দৌলতখালী, চরদিয়াড়, মাজদিয়াড়, ভুরকাপাড়া, বিসিকে বাজার, ধর্মদহ, প্রাগপুর, বিলগাথুয়া, মহিষকুন্ডি, ভাঙ্গাপাড়া, জামালপুর, চিলমারী, বগমারী, চল্লিশপাড়া, ডাংমড়কা বাজার, খলিসাকুন্ডি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক স্পটে মাদক ব্যবসা হয়ে থাকে। এসব এলাকার সোর্সরা সরাসরি মাদক সেবন ও ব্যবসায় জড়িত।

এরা পুলিশের সঙ্গে চলাফেরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহসও করেনা কেউ। এরা অনেক সময় নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অথবা পুলিশের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করে থাকে। যেমন থানার পাশে বিলপাড়া এলাকার পুলিশের সোর্সরা এমন কর্মকান্ড প্রায়ই ঘটিয়ে থাকে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।

অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য পুলিশের সোর্সের প্রয়োজন হয়। এর জন্য পুলিশের সোর্সমানিও বরাদ্দ রয়েছে। তবে সোর্সমানির অর্থ কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। ফলে তারা নিজ নিজ এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে তাদের পাওনা পুশিয়ে থাকেন।

সন্ধ্যার পর বা রাতে এদের তৎপরতা বাড়ে। এ সময় নিরাপদে মাদক ক্রয়ের জন্য মাদকসেবীরা ভিড় করে সোর্সদের কাছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। দেওয়া হয় মাদক মামলা। পুলিশের সোর্স বাদে অন্য কেউ মাদক ব্যবসা করলে তাকে নিয়মিত মাসহারা দিতে হয় সোর্সকে এমন অভিযোগও রয়েছে এলাকাবাসীর।

বিভিন্ন এলাকার মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এমন ব্যক্তিকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলেও তারা জানান।

যদিও এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মুজবিুর রহমান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তথ্য প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভেড়ামরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ বলেন, মাদক উদ্ধারে অভিমান চলমান রয়েছে। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড