• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধর্ষণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেতারের প্রকৌশলী

  এম. কামাল উদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)

২৮ মে ২০২৩, ১৬:১৫
ধর্ষণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেতারের প্রকৌশলী

আমি সুবিচার চাই, আমাকে বিয়ে করতে হবে। রাঙামাটি বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মহা পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার, সদর দপ্তর, ঢাকা, কোতয়ালী থানা ও রাঙামাটি লিগ্যাল এইডসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে রাঙামাটি বেতারের এক নিয়মিত শিল্পী।

বর্তমানে এই প্রকৌশলী সায়েদ সাহেব অভিনব কায়দায় নিয়মিত অফিস করছে না। অফিসিয়াল গাড়ি তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে। এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের অভিযোগ ঠেকাতে দিন দিন তার দলবল ও পেশি শক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত ৫ মার্চ ২০২২ বাংলাদেশ বেতার, রাঙামাটি কেন্দ্রে যোগদান করে শিল্পী। শিল্পীকে রাঙামাটি বেতার কেন্দ্রে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেন ধর্ষণে অভিযুক্ত আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ।

চাকরি দেওয়ার পর ঠাকুরগাঁও থেকে শিল্পীকে রাঙামাটি বেতারে নিয়ে আসেন এই প্রকৌশলী। শিল্পীকে নিয়োগের কিছু দিন পর কুনজর পড়ে সায়েদ সাহেবের। বাজে ইঙ্গিত করতে থাকে অশ্লীল কথাবার্তা, অফিস রুমে গিয়ে হাত ধরে টানা হেঁচড়া ও এক পর্যায়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করা, রাত দিন ফোন অশ্লীল কথা বলে। প্রকৌশলী সায়েদ বিভিন্ন নাম্বার থেকে কথা বলতো, শিল্পী তার কথা শুনতে না চাইলে তাকে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো।

শিল্পী বলেন, এক দিন সে আমার অফিস রুমে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তখন আমি সহ্য করতে না পেরে গত ৮ আগস্ট ২০২২ সুইসাইড করার চেষ্টা করি। তখন সায়েদ সাহেব আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং আমার কাছে মাফ চান, আর কোনো দিন এসব কাজ সে করবে না। তখন আমি মান সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছুই বলিনি। আবার কিছু দিন যেতে না যেতে সায়েদ সাহেব আমাকে বিরক্ত শুরু করে এবং শুধু চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন আমি তাকে বলি আপনি আমাকে অফিসিয়াল ব্যাপার ছাড়া ফোন দেবেন না। এর পর আবারও গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বাসায় আসেন বাসার জানালা দরজা সংস্কার করা হবে বলে।

তার দাবি, কিন্তু উনি ওই সময় মিস্ত্রি নিয়ে আসার কথা ছিল। মিস্ত্রি নিয়ে আসে নাই। একা একা আমার বাসায় আসে। তখন জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি চিৎকার করলে সে দ্রুত রুম থেকে পালিয়ে যায়। তারপর আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি সায়েদ সাহেবকে আমার মান সম্মান বাঁচাইতে বিয়ে করার কথা বলি।

তিনি আরও বলেন, তখন তিনি এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে আমাকে বলে তোমার আশা পূর্ণ হবে আগে সুস্থ হও। প্রতিদিন সে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয় এবং প্রতিদিন এসে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে দেয়। কালক্ষেপণ করে গত ৪ মে ২০২৩ আমাকে সে বলে আমি তোমার জন্য সব করতে রাজি আছি কিন্তু বিয়ে করতে পারবো না। আবারো ফের আমি আত্মহত্যার কথা বললে সায়েদ সাহেব সুকৌশলে অফিস স্টাফ রাকিব, হারুন রিপন আলীকে দিয়ে আমাকে দুদফা মারধর করে এবং জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।তখন বিষয়টি রাঙামাটি বেতার ও ঠাকুরগাঁও জানাজানি হয়। এ অবস্থায় আমার বিয়ে হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

অভিযোগে শিল্পী আরও বলেন, গত সপ্তাহে রাঙামাটি আইন সহায়তা সংস্থা লিগ্যাল এইড দু’পক্ষকেই ডেকেছে। দু’পক্ষের সামান্য কথা শুনে ফের আগামী ৩০ মে তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। বর্তমানে আমি ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে জীবন নাশের হুমকির মুখে দিনতিপাত করছি। সায়েদ সাহেব নিজেকে অপকর্ম থেকে বাঁচাতে তার সাথে কিছু অফিস স্টাফ নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে ব্যবহার করছে।

তারা হলেন- এসি সুপারভাইজার রিপন আলী, রেডিয়ো টেকনিশিয়ান মো. রাকিবুল, রেডিয়ো টেকনিশিয়ান মো. হারুন, সুমন খাঁন ও শিপন ঘোষ। মূলত : এই অপকর্ম থেকে সায়েদ সাহেবকে বাঁচাতে সার্বিক সহযোগিতা করে এই সব লোকগুলো।

এ দিকে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বেতার সদর দপ্তরের পরিচালক (অনুষ্ঠান) এসএম আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ বেতার। আবুল হোসেনের সাথে ছিলেন উপ পরিচালক শরীফুর রহমান। তদন্ত কমিটি গত (১৩ মে) রাঙামাটি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ঘটনার শুনানি করেছে।

অপর দিকে এর আগে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বেতারের সিনিয়র প্রকৌশলী ভাস্কর দেওয়ান ও বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন।

রাঙামাটি বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল শনিবার (২৭ মে) বিকালে কথা বলতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল লাইন কেটে দেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড