জে রাসেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরের মধুখালী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার কারসাজিতে সৎ বোনকে আপন বোন দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করার অভিযোগ করেছেন বিপ্লব হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী।
তার দাবি- দাতা ও গ্রহীতার অজান্তে বেশি টাকার লাভের আশায় সাফ কবলা দলিলকে হেবা দলিল করা হয়েছে। তবে, এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বিপ্লবের সৎ বোন লাখি বেগম।
অনুসন্ধানে জানা যায়- বিপ্লব হোসেন ও লাখি বেগম পরস্পর সৎ ভাই-বোন। তারা উপজেলার ভূষণা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের সন্তান এবং বিপ্লবের মায়ের নাম শাহানা বেগম ও লাখি বেগমের মায়ের নাম হাজেরা বেগম। বিগত ২০১৫ সালের ৪ জুন সৎ ভাই বিপ্লবের কাছে ৫ লক্ষ ৬৬টি হাজার টাকার বিনিময়ে তিনটি মৌজার ৯ শতাংশ জমি বিক্রয় করেন লাখি বেগম। যার দলিল নং- ২১৫৩/২০১৫ইং।
এই দলিল লেখার কার্যক্রম সম্পাদন করেন মধুখালী দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান। কিন্তু ঐ দলিলে দাতা ও গ্রহীতা দুজনের মায়ের নাম লেখা হয়েছে হাজেরা বেগম। এতে সাহসাই সাফ কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবা দলিলে (দান) কার্য সম্পাদন করেন। এই সুযোগে বড় ধরনের সরকারি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনাও ঘটেছে।
রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে জানা যায়- সৎ ভাই-বোনের মধ্যে হেবা দলিল সম্পাদন করার কোনো বিধান নেই। হেবা দলিল শুধু মাত্র আপন ভাই-বোন, পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়েকে, স্বামী-স্ত্রী এর মধ্যে, দাদা/দাদী-নাতী/নাতনীকে, নানা/নানী-নাতী/নাতনীর মধ্যে হয়ে থাকে। অথচ মধুখালী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ২১৫৩/২০১৫ দলিল নং- এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দলিল লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জমি গ্রহীতা বিপ্লব হোসেন এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন- আমি ২০১৫ সালে আমার সৎ বোন লাখির নিকট থেকে ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকায় ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমিটির দলিল সম্পাদন করেন দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম খান। সে আমার নিকট থেকে সাফ কবলা দলিল মূলে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু দলিল করেছে হেবা, যেখানে এতো খরচও লাগে না। আমি তাকে টাকা দিয়ে চলে আসি। এরপর দলিল গ্রহণ করার পর নামজারি করার জন্য ভূমি অফিসে আবেদন করলে আবেদনটি বাতিল করে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে আমি তহসিল অফিসে জানতে চাইলে তারা বলেন- সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সৎ বোনকে আপন বোন দেখিয়ে হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করেছেন, এ জন্য নামজারি হবে না। পরে আমি দলিলে দেখি, আমার মায়ের নাম হাজেরা বেগম লেখা হয়েছে কিন্তু আমার মায়ের নাম হবে শাহেদা বেগম। বিষয়টি নিয়ে আমি দলিল লেখকের নিকট জানতে গেলে সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে তাড়িয়ে দেন এবং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি-ধমকি দেন। আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে বলতে চাই- সফি খান আমার অজান্তে প্রতারণা করেছে। আমি এই প্রতারকের বিচার দাবি করছি।
অনুসন্ধানকালে কথা হয় লাখি বেগমের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন- আমি এবং বিপ্লব সৎ ভাই-বোন। আমার মায়ের নাম হাজেরা বেগম। আমি বিপ্লবের কাছে জমি বিক্রি করেছি, দান করি নাই। পরে শুনেছি, আমাদের মাঝে হেবা দলিল হয়েছে। কিভাবে হয়েছে আমি কিছুই জানি না।
মধুখালী দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন। তার দাবি- বিপ্লব ভুল তথ্য সরবরাহ করে নিজের নামে দলিল করেছেন।
তিনি বলেন- দলিল চূড়ান্ত করার আগে সাব-রেজিষ্ট্রার তাদের স্টেটমেন্ট নিয়েছে, সেখানে তারা স্বীকার গিয়েছিলো, আপন ভাই-বোন। সে অনুযায়ী রেজিষ্ট্রি হয়েছে, যা নথিভুক্ত আছে। চতুর বিপ্লব নিজের বিপদ আচ করতে পেরে রাজস্ব ফাঁকির দায় দলিল লেখকের উপর চাপিয়ে পার পেতে চান।
এ বিষয়ে মধুখালী সাব-রেজিষ্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন- এ বিষয়ে জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী, আমিও একটি কপি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। যদি তথ্য গোপন করে দলিল হয়ে থাকে তাহলে এর সাথে যারা যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড