• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদায় ডিম সংগ্রহকারীরা

  আবিদ মাহমুদ, রাউজান (চট্টগ্রাম):

২৭ মে ২০২৩, ১৩:১৫
প্রজনন

জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপদাহ, অনাবৃষ্টিতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। সম্প্রতি নমুনা ডিমের দেখা মিললেও প্রজননের ভরা মৌসুমে জো’র পর জো গেলেও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। ভেস্তে যেতে বসেছে ডিম সংগ্রহকারীদের নৌকা, জাল, মাটির কূয়াসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জামের জন্য করা বিনিয়োগ। তবুও আশা ছাড়েনি রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার নদীর দুই পারের ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের অপেক্ষা কেবল বৃষ্টির।

গত কয়েকদিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও হালদার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন বর্তমানে চতুর্থ জোঁ’ও চলে গেছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নেমে না আসায় হালদায় বর্তমানে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ নেই। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল নামলে হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং আগামী মাসের অর্থাৎ জুনের প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৬ জুন) পূর্ণিমার জোঁ এবং সর্বশেষ অমাবস্যার জোঁ’তে (১৫ থেকে ২০ জুন) পুরাদমে ডিম ছাড়তে পারে কার্পজাতীয় মা মাছ।

একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন অন্যদিকে মানবসৃষ্ট ক্ষতির প্রভাবে হালদা নদী তার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে দাবি ডিম সংগ্রকারীদের। হালদার প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালদার গভীরতা অনেক কমে গেছে। এক সময় হালদা নদীতে ২০-২২টি কুম ( গভীর গর্ত) ছিল। প্রতিটি কুমের গভীরতা ছিল ২০০ থেকে ২৫০ ফুট। রাবার ড্যাম, নদীর ১৭-১৮টি শাখাগুলোতে স্লাইচ গেট স্থাপন, জিও ব্যাগ ফেলাসহ নানা কারণে কুমগুলো ভরাট হয়ে টিকে আছে মাত্র ৭-৮টি। মাছোয়াঘোনা পোড়াগোপালী, কাগতিয়ার মুখ, সিপাহী ঘাট, অংকুরি ঘোনা , সর্তারঘাট, গহিরা ব্রীক ফিল্ড এলাকায় টিকে থাকা কুমগুলোর গভীরতা ২০-২৫ফুট বা তার চেয়ে কিছু বেশি বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা।

ডিম আহরণকারীদের মতে, প্রজনন মৌসুমে ১ মণ বা তার চেয়ে কম-বেশি ওজনের মা মাছ বড় বড় গভীর কুমে আশ্রয় নেয়। ডিম ছাড়ার সময় পূর্বপশ্চিম সোজা বাঁকে জোয়ার বা ভাটায় ডিম ছাড়ে আশ্রিত মা মাছগুলো। সে ডিম কুমে পড়ে, পাকে ঘূর্ণি হয়ে ডিম ভেসে উঠে। ভেসে উঠা ডিমের গতি বাড়ে পানির চেয়ে বেশি। সে ডিম জালে আটকিয়ে সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। পরে হ্যাচারী বা মাটির কুয়ায় বিশেষ পক্রিয়া ডিম থেকে রেণুতে রূপান্তর করে বিক্রি করা হয়। যুগ যুগ ধরে এভাবে ডিম সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

হালদা নদীর অভিজ্ঞ প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমাদের জন্য হালদার আজ এ অবস্থা। আমরা মানুষ ঠকাই, আল্লাহ আমাদের রিযিক কেড়ে নিচ্ছে।

হালদা কত অত্যাচার সহ্য করবে প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন প্রতিকেজি রেণু বিক্রি করি ২ লাখ টাকায়, পানি মিশিয়ে পানির দামও নিই, মাছ চুরি করি। হালদা গায়েবী ধন, আমরা মানুষ ঠকাচ্ছি তাই দিন দিন আমাদের রিযিকও কমে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হালদায় সাকার ফিস এর বিচরণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মুখে শুনেছি মাছের খাদ্য ধ্বংস করে এ সাকার ফিস। আক্ষেপ করে বলেন হালদার শাখাখালগুলোতে স্লাইচ গেইট নির্মাণ করে হালদা ভরাট হয়ে ক্ষতি হয়েছে। কৃষি উন্নয়নও হচ্ছে না, শাখাখালগুলো মাছশূণ্য। এক সময় শাখা খালগুলোতেও মা মাছের বিচরণ ছিল।’

হালদা গবেবষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আজও পর্যন্ত ডিম না ছাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাত না হওয়া। বৃষ্টিপাত হলে যদি ডিম না ছাড়তো তাহলে অন্য প্যারমিটাগুলোর প্রভাব ধরা হতো। তখন হালদা পাড়ে তামাক চাষ, কুম ভরাটসহ বিভিন্ন কারণগুলো বিবেচনা করা হতো। গত বছর মে ও জুন মাসে পুরোদমে ডিম ছেড়েছিল। সে হিসেবে এবার আগামী জুনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ।

অন্যদিকে ডিম সংগ্রহের জন্য উভয় পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর। তিনি জানান, সরকারি হ্যাচারীগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫০০ কেজি। ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড