মো. আবুবকর মিল্টন, বাউফল (পটুয়াখালী)
আবহাওয়া অনুকূলে থাকা পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে পান চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ বছরে তিনগুণ দাম বেশি পাচ্ছেন তারা।
পানের মধ্যে রয়েছে- বাংলা পান, সাঁচি পান, মিঠা পান, গোলাব পান, জর্দা পান, কহিনুর পান, বেনারসি পান আরও প্রভৃতি ধরনের পান জাত রয়েছে। বাংলা পান জাতের পাতার ফলক বড়, পাতলা, গোলাকার ও পাতাগুলি ছোট। পাতার বোঁটা বেশ লম্বা, এর শাখা হয় না, ফলন সব থেকে বেশি এবং স্বাদও ভালো। মিঠা পানের পাতা ছোট, মোটা, নরম ও লম্বাটে।
বাউফলে ২১ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে, পান চাষ লাভজনক হওয়ায় গ্রাম অঞ্চলেও নতুন করে পানের বরজ তৈরি করছেন নতুন ছয়জন পানচাষি। আবার অন্য দিকে এ ব্যবসা থেকে সরে গেছেন অর্ধ শতাধিক পানচাষি, অভিজ্ঞ চাষিদের থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন নতুন চাষিরা। এছাড়া জটিল বিষয়ে কৃষি অফিসেও যাচ্ছেন তারা।
সরজমিনে দেখা গেছে, এবারের শীতের ও তীব্র গরমে তেমন প্রভাব পড়েনি পানের বরজে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশ ভালো। চাষিদের হিসাবে ৪টা পানে এক গোন্ডা তার নয় গোন্ডায় এক চল্লি, আর ২০ চল্লিতে এক বিরা পান, ৮০ বিরা এক গাদি, বাজারে ঘুরে, এক চল্লি বড় পাতা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, মধ্যম পর্যায়ে এক চল্লি ৫০-৮০ টাকা, সর্বনিম্ন পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা চল্লি!
বামনী কাঠী গ্রামের পানচাষি বিমল চন্দ্র দাশ বলেন, আমার ৩ শতাংশে একটা বরোজ তার দুইটা বরোজ আছে আমার। প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত গোল পাতা মিষ্টি পান চাষ করি। নিজের বরে নিজেই সব কাজ করি। মাঝে মধ্যে বাহির থেকে লোক কাজে নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পান পরিচর্যা করি। এ বছর পানের ফলন ভাল হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরে শীত কুয়াশায় পান নষ্ট হয়। কিন্তু এ বছর প্রচুর কুয়াশা ও শীতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি পানের। আবার এবার কঠিন গরমেও তেমন প্রভাব পরেনি পানের গায়ে। আমি মাসে দুইটা বরজ থেকে ১০০ বিরা পান নামাই, তা পাইকারি বাজারে ২০০০০ টাকা বিক্রি করি। পান চাষ ছাড়া অন্য কোনো চাষাবাদ করি না। এটি চাষ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব ভাল আছি।
বানাজোরা গ্রামের আরেক পান চাষি মোকবুল হোসেন বলেন, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে পানের বরজের পরিচর্যা করে আসছি। এ বছর আমার বরজে ঝাড়া পান বেশি পেয়েছি। পুরাতন পান শেষের দিকে। নতুন পানপাতা বের হতে শুরু করেছে। তবে কিছু ঝাড়া (বড় পাতা) পান আগালে রেখেছি ভাল দাম পাবো বলে। কয়েকদিন পর পানের বাজার আরও চড়া হবে। তখন ঝাড়া (বড় পাতা) পান নামাব এবং বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে ভাল লাভ হবে। সংসারের সকল চাহিদা মেটাবো।
বগা বাজারের পান ব্যবসায়ী মিলন হোসেন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে এ সময় পানের দাম অনেক বেশি। প্রতি বছর এ সময় পানের দাম কম থাকে। যেমন- বড় পান ৪০ টাকা মাঝারি ৩০ ও ছোট পান ২০ টাকা দর। কিন্তু এ বছর পান তিনগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বাজার থেকে। এতে করে বেশি প্রভাব পড়ছে পানের খিলির দোকানে।
বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এ বছর পান চাষ ভাল হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েনি তাদের পানের বরোজে। রোগ-বালাইও কম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত তাদের পানের বর পরিদর্শন করছি। নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি কৃষকদের। ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড