• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পুরনো দরজা-জানালার কোটি টাকার কারবার

বছরে বেচাকেনা হয় ১৫ কোটি টাকার দরজা-জানালা

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

২০ মে ২০২৩, ১৬:২২
পুরনো দরজা-জানালার কোটি টাকার কারবার

মেঘনা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের মিলনস্থলে জনপদ নিয়ে গড়ে উঠে ভৈরব বাজার নদী বন্দর। কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা হচ্ছে এই বন্দর নগরী ভৈরব। এখানে বাংলাদেশের সকল জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় গড়ে উঠেছ ব্যবসায়ী নগরী হিসেবে। তাই সকল ব্যবসা করার উপযোগী হচ্ছে এই নদী বন্দর এলাকা ভৈরব।

মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষেই ভৈরব বাজারের অবস্থান। এ বাজারে যেসব পণ্যের ব্যবসা হয়, তার মধ্যে অন্যতম পুরনো দরজা জানালা ব্যবসা। ভৈরব বাজারের টিনপট্টি ও কাট পট্টিতে পুরনো দরজা জানালা দোকানগুলো থেকে দরজা-জানালার ব্যবসায় বছরে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকার পুরনো দরজা জানালা বেচাকেনা হয়। মূলত নিম্নবিত্তরাই পুরনো দরজা জানালা কিনেন ভৈরব বাজার থেকে।

দিনদিন এই ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। এছাড়া কম দামে দরজা জানালা পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। সড়ক ও নদীপথে খুব সহজে এবং কম খরচে দরজা জানালা নিয়ে যেতে পারেন তারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এইগুলো বন্ধ হলে এই ব্যবসা আরও প্রসারিত হবেন বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, প্রায় অর্ধশত বছর ধরে ভৈরব বাজারের টিনপট্টিতে পুরনো দরজা জানালা বেচাকেনা হচ্ছে। বর্তমানে পট্টিতে পুরনো দরজা জানালার দোকান আছে ১৫-২০টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুরনো বিল্ডিং বাসা-বাড়ি, অফিস ভেঙে ও পুরনো ঘর থেকে দরজা জানালা কিনে ভৈরব বাজারে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় শ্রমিক ও মিস্ত্রীরা ধুয়ে মুছে ও সামান্য মেরামতের কাজ করে বিক্রির উপযোগী করে তুলেন। তারা জানায়, সাধারণত গামারী কাঠ দিয়ে দরজা তৈরি করলে এর খরচ হয় প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা আর তাদের কাছ থেকে পুরনো দরজা নিলে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। আবার বার্মাটিকস সেগুন কাঠ দিয়ে দরজা তৈরি করতে লাগে ৫০-৬০ হাজার টাকা আর সেটা তাদের কাছ থেকে নিলে লাগে ১৫-১৬ হাজার টাকা ।

সেগুন, আকাশী, গামারী, লোহা ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠের দরজা-জানালা মিলবে ভৈরব বাজারের দোকানগুলোতে। এছাড়া দোকানগুলোতে পাওয়া যায় স্টিলের দরজাও। কাঠ ও আকার অনুযায়ী একেকটি দরজা বেচাকেনা হয় পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। আর জানালাগুলো বিক্রি হয় ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত দরে। মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই এসব পুরনো দরজা-জানালার ক্রেতা।

খরচ বাদ দিয়ে দুই পার্টের দরজাগুলো বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের লাভ হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক পার্টের দরজায় লাভ হয় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। প্রতি বছর অন্তত ১২-১৫ হাজার পিস পুরনো দরজা-জানালা বেচাকেনা হয় এই বাজারে। গড়ে যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

ভৈরব বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা পুরনো দরজা-জানালা কিনেন। সাধ্য অনুযায়ী কম দামে দরজা-জানালা কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।

সরাইল গ্রাম থেকে দরজা নিতে আসা আবুল হোসেন বলেন, বাড়ির সংস্কার কাজ করার সময় ভৈরব বাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের পাঁচটি দরজা কিনেন। এই দরজাগুলো নতুন বানাতে গেলে তার খরচ পড়ত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা দিয়ে দরজা বানানোর সম্ভব না আবার সময়েরও ব্যাপার আছে। পুরনো দরজা-জানালা কিনতে পারায় সবার জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া দামে কম ও মানে ভাল থাকায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মোস্তফা কামাল নামের এক ক্রেতা ১০টি দরজা কিনে নিয়েছেন।

পুরনো দরজা-জানালার ব্যবসায়ী মক্কা ট্রেডার্সের মালিক মো. সোহাগ মিয়া বলেন, আমি পুরনো দরজা-জানালার ব্যবসা করছি। বছরে গড়ে ৪০০ পিস দরজা-জানালা বিক্রি করতে পারি। মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই আমাদের ক্রেতা। সাধ্যমতো দামে কিনতে পেরে ক্রেতারা যেমন খুশি, তেমনি ব্যবসা ভালো হওয়ায় আমরাও খুশি। কিন্তু ইদানীং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিম্ব মানের কাঠ দিয়ে নিজেরা দরজা জানালা তৈরি করে বিক্রি করছে যা সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। আর আমাদের বাজারের বদনাম হচ্ছে।

হাজি আবুল কাসেম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হাজি আবুল কাসেম বলেন, আমি আমার বাবার কাছ থেকে এই ব্যবসা বুজে নিয়েছি আর এখন আবার আমারই ছেলেও এই ব্যবসায় জড়িত আছে। আমাদের সারা বছরই ব্যবসার মৌসুম। আমাদের কাছ থেকে সুলভ মূল্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি ও খুচরা দরজা জানালা কিনে নিয়ে যায়। প্রতি মাসে গড়ে ৮০- ৯০ হাজার টাকা লাভ হয় এ ব্যবসা থেকে।

২০ বছর ধরে পুরনো দরজা-জানালার ব্যবসায় যুক্ত থাকা হাজি মুছা মিয়া বলেন, আমাদের ভৈরবে সরাইল, কুলিয়ারচর, রায়পুরা ও হবিগঞ্জ এলাকা থেকে লোকজন আসে এই দরজা জানালা নিতে। কারণ এখানে মানে ভাল দামেও সাশ্রয়। এছাড়া সকল শ্রেণির মানুষেরা এই দরজা জানালা নিয়ে থাকেন।

পুরনো দরজা জানালা ব্যবসায়ী নাজমুল হক রুবেল বলেন, এই বাজারের পুরনো দরজা-জানালার ব্যবসার ফলে এলাকার অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সাধ্যমতো দামে দরজা-জানালা কিনতে পারছেন। এতে করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা- দুই শ্রেণিই লাভবান হচ্ছেন।

তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে কিছুটা সমস্যা। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

এ ব্যাপারে ভৈরব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব বাজারে খুব সুনামের সহিত পুরাতন দরজা জানালার ব্যবসা করে আসছে। এখানে বছরে প্রায় ১২-১৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে এনে এই বাজারে বেচা-কেনা করেন ব্যবসায়ীরা। ইদানীং আমরা শুনতে পাচ্ছি ব্যবসায়ীদের যারা ক্রেতা আছে তারা প্রতারিত হচ্ছে।

তাই তাদের সজাগ দৃষ্টি রেখে চলার জন্য আহবান জানান। আর সেই সাথে এই বাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সবাই ঐক্যভাবে ও সৎ ভাবে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড